দেড় হাজার বছর পূর্বের হিন্দু মহাপুরুষ শীলভদ্রের কিছু কথা
কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গ্রন্থের সূত্রমতে, কৈলান গ্রামের একটি ব্রাহ্মণ রাজ পরিবারে শীলভদ্র ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মৃত্যুবরণ ৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে। ঐতিহাসিক শ্রী কৈলাসচন্দ্র সিংহ তাঁকে ‘সমগ্র বাঙালি জাতির আদি গৌরবস্তম্ভথ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপথ প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও একটি কথা আমাদের মনে রাখবার যোগ্য। নালন্দায় হিউয়েন সাঙ-এর যিনি গুরু ছিলেন তিনি ছিলেন বাঙালী; তাঁর নাম শীলভদ্র। তিনি বাংলাদেশের কোনো এক স্থানের রাজা ছিলেন, রাজ্য ত্যাগ করে তিনি বেরিয়ে আসেন। এই সঙ্গে যাঁরা শিক্ষাদান করতেন তাঁদের সকলের মধ্যে একলা কেবল ইনিই সমগ্র শাস্ত্র সমস্ত সূত্র ব্যাখ্যা করতে পারতেন।
শীলভদ্র সম্পর্কে জানা যায়, বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ -এর বই থেকে। হিউয়েন সাঙ প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে শীলভদ্রের ছাত্র ছিলেন। কুমিল্লা সম্পর্কে হিউয়েন সাঙের বর্ণনা এরকম : এখানে নিয়মিত চাষাবাদ হয়। প্রচুর শস্য আর ফলমূল সর্বত্রই জন্মায়। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ আর লোকদের স্বভাব হচ্ছে ভদ্র। এখানকার মানুষ পরিশ্রমী, লম্বায় কম আর এদের গায়ের রং কালো। এরা প্রবল বিদ্যানুরাগী আর বিদ্যালাভ করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করে। সত্য আর মিথ্যা এই দুই সিদ্ধান্তেরই লোক এখানে থাকে।থ কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে ২টি বড় বিহারসহ ছোট-বড় ৩৫টি বিহার দেখেছেন বলেও হিউয়েন সাঙ উল্লেখ করেন। এ স্থানকে তিনি ‘দি সিটি অব দ্যা ইউনিভার্সিটি বা বিশ্ববিদ্যালয় নগরীথ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। শীলভদ্র শৈশবেই জ্ঞান অন্বেষণে গভীর অনুরাগী ছিলেন।
২০ বৎসর বয়স পর্যন্ত সমতট রাজ্যের রাজধানী বা প্রধান কেন্দ্র অর্থাৎ লালমাই-ময়নামতিতে অবস্থান করেন; প্রারম্ভ শিক্ষা সেখানেই। তরুণ শীলভদ্র রাজকীয় সম্মান ও ঐশ্বর্যত্যাগ করে অধিকতর জ্ঞান অন্বেষণের জন্য ভারতবর্ষের বহু শিক্ষাকেন্দ্র পরিভ্রমণ করে বৌদ্ধধর্মসহ সার্বজনীন শিক্ষায় তিনি সুশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। তিরিশ বছর বয়সে তিনি ভারতের নালন্দায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন।
৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে শীলভদ্র নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আচার্য পদ লাভ করেন। তখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা ১০ হাজার। বিভাগের সংখ্যা ১০০। ১৫০০ শিক্ষক, ১৫০০ স্টাফ। অধ্যাপকের মধ্যে একমাত্র শীলভদ্র একাই ১০০ বিভাগের প্রতিটিতেই গভীর জ্ঞান রাখতেন। শীলভদ্রের প্রকৃত নাম অদ্যাবধি জানা যায়নি। নালন্দায় শীলভদ্রের সঙ্গে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বুদ্ধভদ্র থাকতেন। তিব্বতীয় ভাষায় শীলভদ্রের রচিত বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের উপর একমাত্র গ্রন্থ ‘আর্য বুদ্ধ ভূমি ব্যাখানথ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন