দ্বিধায় আ.লীগ : কর্মসূচি পালনে বিএনপিকে দমন না ছাড়?
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে সংগঠিত করার কৌশলও নিয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় বিএনপিকে সামনে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে বিএনপিকে এ ধরনের কর্মসূচি করতে বাধা দিলে খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়ে যেতে পারে। আবার কর্মসূচি পালন করতে দেওয়ায় বিএনপি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। নিজেদের শান্তিপূর্ণ নীতির দল হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। ধরপাকড়ের মধ্যেও সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে তাদের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণও একটু একটু করে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনের আগে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করতে পারে। ফলে বিএনপিকে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল বিএনপি। তখন ও পরের বছর হরতাল-অবরোধ জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির কারণে বিএনপি সহিংস শক্তি হিসেবে পরিচিতি পায়। সরকারও তাদের কঠোরভাবে দমন করার উপলক্ষ পায়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বিএনপির বক্তৃতা-বিবৃতি ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শান্তিপ্রিয় নীতি ও অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করছে। এমনকি খালেদা জিয়ার সাজা ও তাঁকে কারাগারে পাঠানোর পরও বিএনপি কোনো সহিংস আচরণ করেনি। আওয়ামী লীগের ধারণা ছিল, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিলে বিএনপি সহিংস আন্দোলনে নামবে। সেটা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতিও ছিল সরকারের।
সরকারদলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির কর্মসূচি বা তাদের কৌশল যাতে কাজে না লাগে, সে জন্য পাল্টা কৌশল নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার সাজাকেন্দ্রিক যে আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি, তা আদালতের রায়ের অবমাননা—এই প্রচার করবে আওয়ামী লীগ। গ্রেপ্তার অভিযানও অব্যাহত রাখা হবে, যাতে বিএনপি নেতাদের তৎপরতা ও কর্মসূচিতে কর্মীদের উপস্থিতি কম থাকে। আর খালেদা জিয়া জামিন পেলে বিএনপির কর্মসূচি পালনে কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা বা তাঁর জামিন করা নিয়ে বিএনপির আগ্রহের অভাব আছে। ‘খালেদা জিয়াকে এটা দেওয়া হয়নি, ওটা দেওয়া হয়নি’ বলে সহানুভূতি আদায় করা তাদের মূল লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে বিএনপি সহানুভূতি পাবে। তাদের সহিংস বা শান্তিপূর্ণ যেকোনো আন্দোলনই বৃথা যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য খালেদা জিয়াকে বন্দী করেছে। বিএনপি দলীয় প্রধানের অন্যায় সাজার বিরুদ্ধে এবং জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। তাঁর বিশ্বাস, সরকার তাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আচরণ করবে।
৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুলিশের ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যেও ওই দিন খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার পথে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেভাবে জড়ো হয়ে বহরে যুক্ত হয়েছেন, তা সরকারি দলকে বিস্মিত করেছে। রায়ের পর তাঁর মুক্তির দাবিতে প্রথমে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। এরপর মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করে শান্তিপূর্ণভাবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। নতুন করে আরও তিন দিনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শনিবার সারা দেশে গণস্বাক্ষর অভিযান, ১৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর ছাড়া সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ।
২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে চায় দলটি। এ জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। তবে সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা কম। নয়াপল্টনে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপিকে সমাবেশ বা অন্য কর্মসূচি করতে দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দেখবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মূল্যায়ন হচ্ছে বিএনপির মধ্যে এই উপলব্ধিও এসেছে যে সহিংসতা করে সরকার নামানো কিংবা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। এ জন্য তারা খালেদা জিয়ার কারাভোগকে সহানুভূতি আদায়ের উপলক্ষ হিসেবে নিয়েছে। একই সঙ্গে নিজেদের সংগঠিত করে নির্বাচন পর্যন্ত দলকে টেনে নিতে চায় তারা। সৌজন্যে : প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন