নওগাঁয় সমাজপতিদের রায়ে মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক গৃহবধূকে শুদ্ধ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর বাঁশপাড়া পাড়া নামক একটি গ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে তাঁর মাথায় ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। ওই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সমাজপতিরা এ কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (২৮ আগষ্ট) সকাল ৯টার দিকে ওই গৃহবধুর বাড়ির আঙিনায় মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার এ ঘটনা ঘটে। বিপুলসংখ্যক উৎসুক লোকজন ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সমাজপতিদের কাউকে গ্রামে গিয়ে পাওয়া যায়নি। ওই গৃহবধূর প্রতিবেশী নারীদের দাবি- পাশ্ববর্তী সোনারপাড়া গ্রামের এক মসলিম যুবকের সঙ্গে ঐ গৃহবধূর অনৈতিক সর্ম্পক ছিল। গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করা হয়েছে। গৃহবধূর স্বামীর সম্মতিতে সমাজপতিরা এ কাজটি করেছেন।
সোমবার দুপুরের পর ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, গৃহবধূ শাড়ীর আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছেন। প্রতিবেশী নারীরা গৃহবধূকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। ওই গৃহবধূ বলেন, আমি কারো সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পক করিনি। সমাজপতিরা আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ঘোল ঢেলে দিয়েছন। কারও বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই।
প্রতিবেশী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা জানান, ওই গৃহবধূ দুটি কন্যা সন্তানের জননী। পাশ্ববর্তী সোনারপাড়া গ্রামের কমল হোসেনে নামে বিবাহিত মসলমান এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরকীয়ায় সম্পর্ক ছিল। ১০-১২ দিন আগে নিজ বাড়িতে অনৈতিক সর্ম্পক করার সময় গৃহবধূকে তাঁর স্বামী হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপর গৃহবধূ তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যান। গত শনিবার গৃহবধূ তাঁর বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। গৃহবধূকে শুদ্ধ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সোমবার সকাল নয়টার দিকে গ্রামের লোকজনের উপস্থিতিতে গৃহবধূর বাড়ির আঙিনায় তাঁকে শুদ্ধ করার আয়োজন করা হয়। এক পুরহিতকে ডেকে এনে গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করার পর মাথায় ঘোল ঢেলে দেওয়া হয়। তাঁর স্বামীর সম্মতিতে এ কাজ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক নারী বলেন, শুদ্ধ করার সময় গ্রামের উৎসুক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শুদ্ধ করার রীতি আমাদের ধর্মে আছে। এছাড়া গৃহবধূ ও তাঁর স্বামী এ কাজে কোনো আপত্তি জানায়নি।
ঐ একই গ্রামের হিন্দুধর্মালম্বী বাসিন্দা গোবিন্দ সাহা (৭৫) বলেন, আমার বয়সে আমাদের গ্রামে বা অন্য কোথাও আগে কখনো মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেনি বা আমি শুনিনি। অনৈতিক সর্ম্পক বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁকে তার স্বামী কখনো অনৈতিক কাজ করার সময় হাতেনাতে ধরেনি। ঐ গৃহবধুর স্বামী ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই গৃহবধূ প্রতিহিংসার শিকার।
এই শুদ্ধ করণের রায় কে দিলো বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতব্বর বিমল এই রায় দিয়েছেন। তাঁর সাথে এই গ্রামের আরো কয়েক জন মাতব্বর ছিলেন।
এ বিষয়ে মাতব্বর বিমল এর সাথে কথা বলতে জাবারীপুর বাজারে তাঁর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁর ০১৭২৫-৭৩৬২৫৮ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মথুরাপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বর শফিকুল ইসলাম বাবুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ঘটনাটি দুপুরের পর শুনেছি এবং সংগে সংগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। এবং তাঁর কিছু পরই এসআই মুনিরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে আমি তাঁকে ঘটনাটি জানিয়েছি।
বদলগাছী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সভাপতি বৌদ্দ নাথা বলেন, এরকম নিয়ম আছে বলে আগে কখনো শুনিনি।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহবধূকে মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে দেওয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন