নওগাঁর বদলগাছীতে চোরাই ইউরিয়া সারসহ জনতার হাতে আটক-২
নওগাঁর বদলগাছিতে পৃথক পৃথক দুটি স্থান থেকে কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তা ও ডিলারদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাই ভাবে কৃষকের মাঝে সার না দিয়ে ব্যবসায়ীর নিকট ইউরিয়া সার বিক্রি হচ্ছে। বহনকৃত ইউরিয়া সারসহ দুইজন ভ্যান চালক ও দুইজন ক্রেতাকে আটক করে সাধারণ জনতা।
আটককৃতরা হলেন, বদলগাছীর মেসার্স অনুপ ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী চিতা নামক সার ডিলার ও তার ক্রেতা বদলগাছীর মাছ বাজার এলাকার ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী আজাদ এবং কোলা বাজারের সোলায়মান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জুয়েল হোসেন এবং তার ক্রেতা ভাতশাইল গ্রামের রিংকু।
শনিবার (১ অক্টোবর) বদলগাছী উপজেলার গোবরচাঁপা হাটের সাব-ডিলার মেসার্স অনুপ ট্রেডার্স এর মাধ্যমে ১০ বস্তা ইউরিয়া সার চোরাই ভাবে বাজারে বিক্রয় করার সময় মেসার্স অনুপ ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী চিতা ও তার ক্রেতা বদলগাছী মাছ বাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজাদকে আটক করে জনতা। অবৈধভাবে বহনকৃত সার আটকের ব্যাপারটি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিয়া খাতুন ও কৃষি অফিসারকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এর কিছুক্ষণ পর বদলগাছীর ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে রিংকু নামক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ৮ বস্তা সারসহ আটক করে স্থানীয় জনতা। রিংকু বদলগাছীর কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) শামসুল আলম খানের সহযোগিতায় কোলা বাজারের সার ডিলার জুয়েলের কাছ থেকে সার কিনে বেশি দামে চোরাইভাবে বাজারে বিক্রয় করার সময় নিয়ে যাচ্ছিল।
জানা যায়, বদলগাছীর মাছ বাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজাদ ১২৬০ টাকা বস্তা দরে ১০ বস্তা সার কিনে চোরাই বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আজ সকালেও এলাকার কৃষকেরা সার নিতে এসে ডিলারের কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছিল বেশ কয়েকজন ক্রেতাকে।
এলাকাবাসি বলেন, তারা সার না পেয়ে ডিলারের দোকানের আশে পাশেই বসে ছিলেন সার পাওয়ার আশায়। এমন সময় কৃষকদেরকে সার না দিয়ে অবৈধভাবে অন্যত্র দশ বস্তা সার বিক্রির সময় ক্রেতা ও বিক্রেতাকে আটক করে জনতা।
গোবরচাপাঁহাটের শরিফুল বলেন, আমরা সাধারণ কৃষকরা সার পাচ্ছি না। আর আমাদের এখান থেকে অন্যত্র সার নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসারকে জানানোর পরেও কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে অনূপ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চিতা বলেন, ভাই এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেন না। এ বিষয়ে নিউজ না করতে অনুরোধ করেন তিনি। কোলা বাজারের সোলায়মান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জুয়েল বলেন, আমার কাছ থেকে কৃষি অফিসের উপ-সহকারী (বিএস) শামসুল আলম খান ইউরিয়া সার নিয়েছে। সে কাকে দিবে আমি জানি না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যান চালক বলেন, আমার কাছে এই মালের কোনও মেমো নেই। এসব ইউরিয়া সার কোলা থেকে শামসুল বিএস আনছে। এই সব সার ভাতশাইল যাবে। অপরদিকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) শামসুল আলম খান বলেন, আমাদের ইউনিয়নে সারের চাহিদা থাকায় কোলা থেকে সার আনতে বলেছি। এক-দুই বস্তা আনতে বলেছি।
কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন বলেন, আমার ইউনিয়নে সারের সংকট রয়েছে। এখান থেকে সার অন্য ইউনিয়নে উপ-সহকারী কর্মকর্তা কেন নিয়ে যাবেন। আমার এলাকার কৃষকরা সারের জন্য প্রতিদিন আমার কাছে ঘুরছে।
এ বিষয়ে বদলগাছী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিয়া খাতুন বলেন, আপনি বিষয়টি কৃষি অফিসারকে জানান।
এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, এমাসে আমার এখানে ইউরিয়া সারের কোনও বরাদ্দ নেই। বাহির থেকে সার আসতেই পারে তাতে সমস্যা কি? এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন আপনি কি সাংবাদিক? আপনি গোবরচাঁপা গেছেন সেনপাড়াও গেছেন সারা উপজেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন নাকি? সারগুলো আপনার অফিসের বিএস শামসুল আলম খান কোলাহাট থেকে নিয়ে এসেছেন বললে আমার জানা নেই বলে জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন