নজরদারিতে কর ফাঁকিবাজ বিদেশি কর্মীরা

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায়ে আরো কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর ফাঁকিবাজ বিদেশিদের চিহ্নিত করতে সরেজমিন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআরের টাস্কফোর্স। বিদেশি কর্মী নিয়োজিত থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়ে ইতোমধ্যে সব কর অঞ্চলে চিঠিও দিয়েছে এনবিআর। তালিকা হাতে পেলেই এসব প্রতিষ্ঠানে ঝটিকা অভিযান শুরু হবে বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এদিকে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরিরও নতুন উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ডাটাবেজ তৈরির কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে একজন কমিশনারকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিখুঁতভাবে ডাটাবেজ তৈরির জন্য পুলিশের বিশেষ শাখাকে এ কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে কত বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কোনো সংস্থার কাছে নেই। তবে এনবিআরের কর অঞ্চল-১১ তে প্রায় ১১ হাজারের মতো বিদেশি রিটার্ন জমা দেন, যা বিদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। কেননা কেবল ভারতে প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশি কর্মীদের করের আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এনবিআরের প্রথম সচিব (ট্যাক্স লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক বিদেশি কাজ করলেও অনেকে সঠিকভাবে কর দিচ্ছেন না। তাই বিদেশিদের করজালের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অনিবন্ধিত ১৫ বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কর অঞ্চলগুলোয় বিদেশি কর্মী আছে- এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে বর্তমানে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। যেখানে বিদেশি কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মস্থলের ঠিকানা, বাংলাদেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, কাজের ধরন, বেতন-ভাতাদির তথ্য ও আয়কর পরিশোধের তথ্য উল্লেখ থাকবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আয়কর আদায় করতে ২০১৬ সালে টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। এই টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের রাখা হয়। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক টাস্কফোর্সকে ভাগ করা হয়।
টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে গত বছরের জুলাই থেকে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও একটি স্থলবন্দরে আয়কর বুথ খুলেছে এনবিআর। ঢাকার হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে আয়কর বুথে দায়িত্বে সহকারী কর কমিশনার পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এসব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে অবশ্যই বিদেশিদের আয়কর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হচ্ছে। প্রত্যয়নপত্র দেখাতে না পারলে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, অনেক বিদেশি নাগরিক ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসা বিশেষ করে এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্ট, মার্চেন্ডাইজিং, পরামর্শকসহ অন্য বিদেশিদের বেতন-ভাতা গোপন রাখা হচ্ছে।
মূলত কর ফাঁকি দিতেই এ কৌশল অবলম্বন করছে অনেক দেশীয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















