নতুন কোনো জোটে যাচ্ছেন না এরশাদ
এই মুহূর্তে নতুন কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সম্মিলিত জাতীয় জোটই (ইউএনএ) হলো তার রাজনৈতিক জোট। শরিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কোনো দল কিংবা সংগঠনকে জোটে নেওয়া হচ্ছে না। এটাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের নীতিগত সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে অংশ নিতেই জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠন করা হয়েছে। শরিক দলগুলোও জোটে এসেছে সে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েই। ফলে, সম্প্রতি আলোচিত এলডিপি প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রবদের মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিংবা অন্য কারো নতুন কোনো জোটে আপাতত যাচ্ছে না হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি।
জানা গেছে, জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচন করবেন, এখন পর্যন্ত সে চিন্তাই আছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের। এজন্যই সম্মিলিত জাতীয় জোটের ব্যানারেই তিনি নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে একটি জোট গঠিত হয়েছে। সেই জোটের ব্যানারেই আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ অবস্থায় অন্য নতুন কোনো জোটে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও জোটের শরিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের নেতৃত্বে আমরা জোটে আছি। এই জোট নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নতুন কোনো রাজনৈতিক জোটে যাবেন বলে আমার মনে হয় না। যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত হতো তাহলে শরিক দল হিসেবে আমরা জানতাম।’ তিনি বিষয়টিকে গুজব বলে অভিহিত করেন।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী ও আ স ম আব্দুর রবদের সঙ্গে বৈঠকে জি এম কাদেরের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে তিনি হয়তো বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তাই বলে এরশাদ তাদের জোটে যোগ দিয়েছেন বলা ঠিক হবে না। কারণ, সম্মিলিত জাতীয় জোটের বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। জোট ছাড়তে হলে, জোটে আসতে হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’ নিয়মকানুন মেনেই জোটের কার্যক্রম চলছে বলেও জানান এম এ মতিন।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এলডিপির প্রেসিডেন্ট ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিকল্প জোট গঠনের এক প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুমতি নিয়েই বৈঠকে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন জি এম কাদের। তার অংশগ্রহণের পর গুঞ্জন ওঠে বি চৌধুরীদের নতুন জোটে জাতীয় পার্টি যোগ দিতে পারে। কারণ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেন। আর এ কারণে গুঞ্জনটা আরো জোরালো হয়।
তবে গুঞ্জনের খবরে দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি জাতীয় পার্টির অন্য কোনো জোটে যোগদানের সম্ভাবনা নাকচ এবং জোটগতভাবেই ৩০০ আসনে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে যে সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) গঠিত হয়েছে তার বাইরে আর কোনো জোট গঠনের প্রশ্নেই ওঠে না। তা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলকে এই জোটে নিতে জোটের শীর্ষ নেতাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত লাগবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মিলিত জাতীয় জোট ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সম্মিলিত জাতীয় জোট নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে জোটের মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান যখনই রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যান, তখনই তার বিরুদ্ধে নানামুখি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সেই ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। ষড়যন্ত্র করেই সাবেক এই রাষ্ট্রপতির অগ্রযাত্রা ঠেকাতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট যখন এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষের কাছে আশার সঞ্চার করছে, ঠিক তখনই জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। এটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। অতীতের মতো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তিনি দেশবাসীর প্রত্যাশা পুরণ করবেন।’ নতুন জোট নিয়ে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি জানান, পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টিকে অন্য কোনো জোটে নিয়ে যাবেন না, বরং সম্মিলিত জোটের ব্যানারেই তিনি আগামী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য তিনি আগাম নির্বাচনী তৎপরতাও শুরু করেছেন। ঘোষণা করেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি। আমাদের নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশ দিয়েছেন জোটগতভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন