নমুনা দিয়েও ১২ দিনে রিপোর্ট মেলেনি! মারা গেছেন ১২ জন
রংপুর বিভাগের চার জেলার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। রংপুর মেডিকেল কলেজের একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি নমুনার জটের সৃষ্টি হয়েছে। সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী নমুনা পরীক্ষা করতে না পারায় ঢাকায় পাঠানো হলেও দীর্ঘ ১২ দিনেও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। গত এই ১২ দিনে ফলাফলের অপেক্ষায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন অন্তত ১২ জন।
শনিবার (১৭ জুলাই) রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় নমুনা পরীক্ষার হারও বেড়েছে। গত ১৭ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২৬ জনের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা শনিবার সকালে জানান, ১২ দিন আগে আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় কিন্তু শুক্রবার ৩২০টি নমুনার প্রতিবেদন আসে। গত শুক্রবার আবার ১ হাজার ২০০ নমুনা নতুন করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেলের একমাত্র পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা প্রতিদিন মাত্র ১৮৮টি। তাও আবার রংপুর সিটি কর্পোরেশন সহ রংপুর জেলা, পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার রোগীদের নমুনা পরীক্ষা একমাত্র পিসিআর ল্যাবে করা হয়। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিটি জেলা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য নমুনা পরিক্ষার সংখ্যা নির্ধারন করে দিয়েছে। গড়ে চার জেলার প্রতিটি জেলার জন্য ৩০টি করে নমুনা পরীক্ষা করে পিসিআর ল্যাব রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৩৫টি, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ২৫টি এবং বাকি কয়েকটি পুলিশ বিজিবি আর ভিভিআইপিদের জন্য নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে নমুনা পরীক্ষার কোন সুযোগ নেই।
গত এক মাস ধরে রংপুর অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নমুনা দেওয়ার রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে সক্ষমতার বাইরে প্রায় আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষার অভাবে পিসিআর ল্যাবে পড়ে আছে। দশ দিন আগে বিশেষ ব্যবস্থায় আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইসিডিডিআরে পাঠানো হলেও দীর্ঘ ১২ দিনেও রিপোর্ট আসেনি। এ অবস্থায় কোভিড পজিটিভ না হলে কোভিড হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগী ভর্তি করে না। ফলে নমুনা দেয়া আড়াই হাজার মানুষের মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে করোনার রিপোর্ট আসার আগেই মারা গেছেন অন্তত ১২ জন। ১২ দিনেও নমুনার রিপোর্ট না আসায় রোগী ও তাদের স্বজনরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রংপুর নগরীর হাজিপাড়া মহল্লার সাদেকুর রহমান স্বপন জানান, ১২ দিন আগে তিনি নমুনা দিয়েছেন তারও ২ দিন আগে থেকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে জ্বর আর শ্বাস কষ্টে ভুগছেন কিন্তু আজ হবে কাল হবে বলে ১২ দিন অতিবাহিত হলেও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। এ অবস্থায় বাসায় অবস্থান করলেও যদি সত্যি সত্যিই কোভিড পজিটিভ হন তাহলে আমার পুরো বাড়ির লোকজনও সংক্রমিত হতে পারে। গুরতর অসুস্থ থাকার পরেও রংপুরে কোভিট ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার পর কোভিড পজিটিভ না হলে ভর্তি নেবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
একই অভিযোগ নগরীর মুন্সিপাড়ার সাহাবুল ইসলামের। তিনি ১০দিন আগে নমুনা প্রদান করলেও এখনও রিপোর্ট আসেনি।
নগরীর শালবন এলাকার সালমা বেগম জানান, তার মায়ের নমুনা পরিক্ষা করতে দিয়েছেন ১০ দিন আগে। সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন এখনও রিপোর্ট আসেনি। এই অবস্থায় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কোভিড হাসপাতালেও ভর্তি নিচ্ছেনা।
রংপুর সিটি করপোশেনের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, নমুনার জট তৈরী হওয়ায় তারা নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছি। খুব জোড়াজুড়ি না করলে নমুনা নিচ্ছিনা। শুধু মাত্র সিটি করপোরেশনের ৮‘শ বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য পড়ে আছে রিপোর্ট আসছেনা।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরু জ্জামান রংপুর মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে নমুনা জটের কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে আশা করা হচ্ছে ২/৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট আসবে। নমুনা পরীক্ষা দেরী হলে সংক্রমন বাড়ে। নমুনা পরীক্ষার অভাবে বেশ কয়েকজন রোগী মারা যাবার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ এবং পিসিআর ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও নমুনা জটের কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি। আশা করা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
অপরদিকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ডা. জাকিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের চার জেলার জন্য একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব আছে তার সক্ষমতাও কম ফলে নমুনা জটের সৃষ্টি হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন