নাটোরের গুরুদাসপুরে জমে উঠেছে শ্রমিকের হাট, দর কষাকষি করে চলছে শ্রমিক বিক্রি

কনকনে শীত, হিমেল বাতাস, কোনরুপ শরীরকে চাদরে মুড়িয়ে আড়াল করে পেটের তাগিদে কাক ডাকা ভোরে শ্রম বিক্রির উদ্দেশে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শ্রমিকের হাটে কাস্তে, কোদাল,ধান বাহনের বাক নিয়ে শ্রমজীবী হাজারও মানুষ নিজেদের তুলেছেন শ্রমিকের হাটে।

বিনাহালে রসুন উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এলাকা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এবারে রসুন লাগানো আর ধান কাটা মওসুমে প্রতিদিন বসছে শ্রমিকের হাট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের নয়াবাজার, কাছিকাটা, হাজীরহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বিনাহালে রসুন লাগানো ও ধানকাটাসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য হাজার হাজার দিনমজুর নারী-পুরুষ এই শ্রম বিক্রি হাটে এসে উপস্থিত হন।

শীত উপেক্ষা করে আর্থিক চাহিদা নিবারনের জন্য এবং পেটের তাগিদে প্রতিদিন ভোর থেকেই দিনমজুররা শ্রম বিক্রির জন্য শ্রমিক হাটে আসেন। ভোর ৪টা থেকে শুরু করে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে শ্রমিক কেনা-বেঁচা, চলে দর কষাকষি। হাট থেকে রসুনের বীজ রোপন,ধান কাটাসহ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য শ্রমিক খরিদ করে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ধারাবারিষা এলাকার খোরশেদ, উদবাড়িয়ার আশরাফুল, শিধুলীর ইমন, মাহাবুর, হাসমারীর সোহাগসহ দিন মজুর খরিদ করতে আসা অন্তত ১৫ জন কৃষক জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া ও পাবনা জেলার চাটমহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাসড়কের নয়াবাজার, কাছিকাটা, হাজীরহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভোর থেকেই শীত উপেক্ষা করে এসব দিনমজুর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা, নছিমন-করিমন, ট্রাকে ও বাসের ছাদে চড়ে এসে হাট বসায় এবং সেখান থেকে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা দিনচুক্তি অথবা কাজচুক্তি হিসেবে উচ্চ মুল্যে মহাজনের কাছে শ্রম বিক্রি করে থাকে।

তবে কাজ অনুযায়ী তাদের আর্থিক চাহিদা বিভিন্ন পর্যায়ের হলেও মোটামুটি প্রতিদিন পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং মহিলা শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে বেলা বাড়লে বসে থাকা শ্রমিকদের মজুরির ম‚ল্য আনুপাতিকহারে কম হয়ে থাকে। কাজের মজুরী ও শ্রমিক সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কাজ।

এঅবস্থায় অনেকেই আবার শ‚ন্য হাতে বাড়ি ফিরেন। আবার নিজের খেয়ে কাজ করার মজুরি এবং তিন সন্ধ্যা খাবার দিয়ে কাজ করার মজুরির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তারা আরো জানান, যদিও মজুরী একটু বেশী তার পরও হাতের কাছে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমাদের অনেকটা উপকারই হচ্ছে।

নয়াবাজার শ্রমিক হাটে অপেক্ষমান দিনমজুর দবিরগঞ্জ ও হরিণচড়ার হযরত আলী, আব্দুস সালামসহ আরো কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের সংসারে লোক সাংখ্যা বেশি এবং তাদের একার উপার্জনের ওপরই সংসারে খাওয়া পড়া নির্ভরকরে। তাই দিবারাত্রী কাজ করেও তাদের অভাব কাটে না বরং অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় শ্রমের মজুরি দিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই কঠিন।

নয়াবাজার দিনমজুর হাটের মহিলা শ্রমিক রুপা,আমেনা,আলেয়া, লাইলীসহ বেশ কয়েকজন আক্ষেপ করে জানান, আমরা পুরুষদের সমপরিমান পরিশ্রম করেও তাদের সমপরিমান মজুরি পাই না। ষাট উর্দ্বে আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর ছিল, এখন সে রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানা সয্যায়।

তাই আমি এই হাটে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন আমার ওপরেই সংসারের খাওয়া- দাওয়াসহ সব কিছু ই নির্ভর করছে। গত বছরের চেয়ে এবছর মজুরির দাম বাড়লেও সাথেও বৃদ্ধি পেয়েছে যাতায়াতের ভাড়াসহ নৃত্যপণ্যর দাম। এতে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।

এলাকাবাসীরা জানান, নয়াবাজারে এই শ্রমিক হাট গত ১৬ থেকে ১৮ বছর ধরে চলছে, যদিও এলাকাবাসীর উপকার হচ্ছে। তবে হাটটি মহাসড়কের কোল ঘেঁষে হওয়ায় এবং ভোরের শীতের কুয়াশাচ্ছন্নতে অনেক সময় রাস্তা পারাপারের মারাত্মক দ‚র্ঘনার ঘটতে পারে। এছাড়াও রাস্তায় কৃত্রিম যানজট বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ বলেন, হাতের কাছে শ্রমিক পেয়ে সহজেই কৃষকরা তাদের কাজের চাহিদা মেটাতে পারছেন। এতে অনেকাংশেই সহজতর হচ্ছে এখানকার কৃষি কাজ যার ফলে উপজেলা জুড়েই বেড়েছে সবধরনের ফসল উৎপাদন।