খেজুর গুড়ের লক্ষ্য মাত্রা ৭ হাজার ৭৮৪ মেট্রিকটন

নাটোরে খেজুরের রস আহরণে গাছ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গাছিরা

দেশের উত্তরাঞ্চলে বয়েছে শীতের আমেজ। হেমন্তের সকালে ঘাসের ডগায় জ্বলজ্বলে শিশির বিন্দু। আবছা কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। খেজুর পাতার মাঝে সূর্যের উঁকি যেন চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে গাছির। তবুও আপন মনে গাছ পরিচর্যায় করে যাচ্ছেন গাছি। চারিদিকে পড়েছে শীতের আগমনী বার্তা। শুরু হয়েছে গাছ থেকে রস আহরণ। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নাটোরে গাছিদেরও বেড়েছে ব্যস্ততা।

শীতের মৌওসমকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদের কতশত আয়োজন, সেই সব আয়োজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান হলো খেজুরগুড়। নানা ধরনের পিঠাপুলির সুঘ্রাণে ম- ম করছে শীতের হিমেল পরশ মাখা সকাল। শীতের স্নিগ্ধতা আলিঙ্গন করে গ্রামীণ জনপদের জীবন ধারা।

বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য খেজুর গুড়ের রয়েছে বেশ খ্যাতি । শীতের কাক ডাকা ভোরে কুয়াশা মোড়ানো শিশির বিন্দুকে উপেক্ষা করে গ্রামীণ জনপদে খেজুরের রস সংগ্রহে বেড়িয়ে পড়েন গাছিরা। কুয়াশা ভেদ করে গাছের মাথার উপরে সূর্য উকি দেওয়ার আগেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি মাটির চুলায় সেই রস জ্বাল করে গুড় তৈরি করা হয়। রস থেকে নানা ধরণের পাটালী, দানা এবং ঝোলা গুড় বানানো হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মওসুমে নাটোর জেলায় রস দেওয়ার মতো উপযোগী গাছের সংখ্যা ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০টি। উপযুক্ত একটি গাছের রস থেকে ১৭ দশমিক ৪০ কেজি গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। ১২০ টাকা কেজি দরে ৭ হাজার ৭৮৪ মেট্রিকটনের দাম ৯৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজার মূল্য ধরা হয়েছে।

জেলার সব উপজেলায় খেজুরগাছ থাকলেও সব থেকে গাছের সংখ্যা ও গুড় উৎপাদনের পরিমান বেশি লালপুরে, দ্বিতীয়তে রয়েছে বড়াইগ্রাম। জেলার ৭ টি উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়ক ও রেল লাইনের দুপাশে, জমির আইল, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে আছে সারি সারি খেজুরগাছ। জেলাজুড়ে অন্তত ১০ হাজার গাছিরা এসময়ে রস আহরোণ করে গুড় উৎপাদন এবং গাছের পরিচর্যার কাজ করে থাকেন।

বড়াইগ্রামের গাছি শুকুর মৃধা জানান, একজন গাছি প্রতিদিন প্রায় ৬০থেকে ৬৫টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করেন। শীত মওসুমে ৭০ থেকে ৭৫ দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় পাওয়া যায়।

শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের কৃষি বিভাগের প্রভাষক জহুরুল ইসলাম জানান, দেশজুড়ে খেজুরের রস এবং গুড়ের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। অথচ চাহিদা পূরণে খেজুরের গাছ রোপণের মাধ্যমে গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কেবলমাত্র শীত পড়লেই সামনে আসে খেজুর গাছের কথা। সুস্বাদু খেজুরের গুড় গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টান্নর চাহিদা পূরণ করলেও এই গুড় বাণিজ্যিকরণে ব্যাপকভাবে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না কৃষি অফিসের।

গাছিরা আরো জানান, খেজুরের গুড়ের মওসুম শুরু হলেই একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চিনি মিশিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করেন। তাছাড়া দীর্ঘদিনের পচা পাটালি এবং ঝোলাগুড় মিশিয়েও গুড় তৈরি করা হয়। এতে করে খাঁটি গুড়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। তারা ভেজাল গুড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজরদারি দাবি করেছেন।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক শাসছুল ওয়াদুদ জানান, এই অঞ্চলের গাছিরা ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। খেজুরের উৎপাদন এবং বিপণনের বিষয়ে তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।