ডেডলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি
নাশকতাকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি চিহ্নিত নাশকতাকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানও শুরু হয়েছে।
বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে মেস, আবাসিক হোটেল, কোচিং সেন্টার ও ফেসবুক। এদিকে বাসে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এ রায়কে ঘিরে দেশজুড়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে গত কয়েক দিনে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে পুলিশের দাবি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকায় তিনটি মামলায় ২০০ জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন থেকেই মেস ও হোটেলগুলোতে নজরদারি শুরু হয়েছে। পুলিশের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী হোটেলে আগত অতিথিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে রুম বুকিং দেওয়া হচ্ছে কিনা এসব নজরদারি করছেন গোয়েন্দারা।
নজরদারির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে হোটেলগুলোতে অতিথির নাম-ঠিকানা লেখা, ছবি তোলা, এনআইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি, ফোন নম্বর রাখা ও ফোন দিয়ে নম্বর যাচাই করাসহ আটটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হোটেলগুলো নির্দেশনামাফিক কাজ করছে কিনা তা নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফর্মে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়িগুলোতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন কিনা সেটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
এছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে এবং গ্রুপে ৮ ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে কিনা সেগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা মেসগুলোতে জড়ো হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করতে পারেন এমন আভাসে থানাভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
থানা পুলিশ নিজ নিজ এলাকার মেসগুলোতে গিয়ে ভাড়াটিয়া ছাড়া অন্য কেউ থাকছেন কিনা তা নজরদারি করছে। এরই মধ্যে নবাবপুর, হাইকোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পল্টন, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।
৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন ও পুরান ঢাকার বকশীবাজারে প্রস্তুত থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। টহল দেবে র্যাব।
যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশের পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। নির্দেশনাগুলো হলো যেসব স্থানে আগে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থান চিহ্নিত করে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা।
থানাসহ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, পুলিশের সব সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখা, টহল বা অভিযানে পুলিশ সদস্যরা একা না গিয়ে একসঙ্গে টহল দেয়া। নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্যামেরা রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তারা ছবি তুলে রাখতে পারেন।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলাও করা হতে পারে। কেপিআইভুক্ত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করতে সারা দেশ থেকে রাজধানী ছাড়াও অন্যান্য বড় শহরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা চলছে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলতে পারে। এমন আশঙ্কার আলোকে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে সতর্ক করেছে পুলিশ।
যেকোনো আন্দোলনে বাস-ট্রাকের মতো পরিবহনগুলো আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ করে আন্দোলনকারীরা। রায়ের দিন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যানবাহন মালিকরা। গত রোববার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে পরিবহন মালিকরা এমন শঙ্কার কথা জানান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৩-১৪ সালের মতো যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানীতে চলাচলকারী সব বাসে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানোর পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া গণপরিবহন পার্কিংয়ের স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসাতে বলা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে নাশকতাকারীরা যেন তাদের টার্গেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, রাজধানীর কোনো পরিবহনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। আমরাও মনে করি, এসব যন্ত্র থাকা জরুরি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন মালিকদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছে।
রায় পরবর্তী সৃষ্ট যে কোনো পরিস্থিতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে জনগণই তা প্রতিহত করবে, আর পুলিশ তো আছেই।
অন্যদিকে পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। পুলিশ দৃঢ়তার সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছে। যাতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকে সেজন্য ৮ ফেব্রুয়ারি কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন