নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ
রাজধানীর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন হুমায়ুন কবির। বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগে বেতন কমে অর্ধেকে নেমেছে। দুই সন্তান নিয়ে কোনমতে রাজধানীতে কোন মতে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েয়ে কয়েকগুন। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। ফলে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে তার কপালে।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে বাসাবো বাজারে সবজি কিনতে এসে তিনি বলেন, করোনার ছোবলে কোন রকম টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কর্মসংস্থান না থাকায় এই মুহুর্তে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। মার্চ থেকে বেতন অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় ছেলের স্কুলের বেতন দিতে পারেননি। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর মধ্যে সবজির দাম বেড়েছে কয়েকগুন। সকালে বাজার করতে আসলেও তালিকার অর্ধেক বাজারও করতে পারছেননা তিনি। তিন বেলা স্ত্রী সন্তানদের খাবার নিশ্চিত করা কঠিন হচ্ছে তার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একমাসেরও বেশি সময় ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এর মধ্যে নতুন করে আরও দাম বেড়েছে। সাতটি সবজির কেজি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। বাকি সবজিগুলোর বেশিরভাগের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। আর হঠাৎ করে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়া আলুর কেজি এখনও ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা আলুর কেজি বিক্রি করছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৩০ টাকা। হঠাৎ আলুর এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় সম্প্রতি খুচরা, পাইকারি ও কোল্ড স্টোর পর্যায়ে সর্বোচ্চ দামে বেঁধে দিয়েছে সরকার। সরকারের নির্দেশে অনুযায়ী, খুচরায় প্রতিকেজি আলুর দাম হবে ৩০ টাকা। তবে সরকারের এ নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো এখনও শিম, টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটি ও উস্তার কেজি একশর ঘরে রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে একশ টাকার তালিকায় নাম লিখিয়েছে শসা।
এর মধ্যে টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।
বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে উস্তারও। এক কেজি উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
এগুলোর পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুল, কচুর লতি। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁকরোলের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা হয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
লাউয়ের পিস গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু মুলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
স্বস্তি মিলছে না কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। গত মাসে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার পর টানা বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে সবজির দাম এমন চড়া।
নিত্যপণ্যের দামের এ ঊর্ধগতি নিয়ে কথা হয় বাসাবো বাজারে আসা আরিফের সাথে। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাজারে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ি। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। ১০০ টাকার সবজি দিয়ে এক বেলাও হয় না। সবজির এতো দাম আমার ৫০ বছরের জীবনে আর দেখিনি। এর মধ্যেই তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেড়ে গেল। আগে কখনো পুরাতন আলুর কেজি ৪০ টাকা কিনে খাইনি। এখন পুরাতন আলুর কেজি ৪৫ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে। এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকা দিয়ে। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম এমন হলে আমরা চলবো কীভাবে ?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন