নির্বাচনের আগের বছর সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার

দেশ থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং তা জাতীয় দুর্যোগের নামান্তর। বিদেশে অসংখ্য বাংলাদেশির আলিশান বাড়ি, ফ্ল্যাট এবং বিদেশি ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় রয়েছে, যে অর্থ পাচার হয়েছে অবৈধভাবে, সরকার তথা আইনের চোখকে ধুলো দিয়ে।

অর্থ পাচারের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে ২০১৩ সালের সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের বছর। এ সময় অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে পাচার হয়েছে ৭২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

জিএফআইয়ের ‘উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধ অর্থপ্রবাহ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থপাচারের এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ১০ বছরে আমাদের দেশ থেকে মোট চার হাজার ৪৬১ কোটি ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা প্রায় তিন লাখ ৬৮ হাজার কোটি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪৯টি দেশের অর্থপাচারের তথ্য রয়েছে। আর এ ১০ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থপাচার দুই ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের মোট পাচার হওয়া অর্থের ২৪ শতাংশ।

যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ চার হাজার ৪৬১ কোটি ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে প্রায় তিন লাখ ৬৮ হাজার কোটি, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের চেয়েও বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার ৫৬ লাখ কোটি টাকা। ২০১১ সালে পাচার হয় ৫৯২ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ২০০৯ সালে ৬১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০০৭ সালে ৪০৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ২০০৬ সালে ৩৩৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ২০০৫ সালে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং ২০০৪ সালে পাচার হয় ৩৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

দেশের মোট আমদানির এক থেকে চার শতাংশ বেশি এবং তিন থেকে ১১ শতাংশ কম মূল্য দেখিয়েই মূলত টাকা পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া মোট রপ্তানির এক শতাংশ বেশি এবং ছয় থেকে আট শতাংশ কম মূল্য দেখিয়েও টাকা পাচার হয়। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরে টাকা প্রবাহের চার থেকে ১২ শতাংশ ও বাইরের সাত থেকে ১২ শতাংশই টাকা পাচার হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১০ বছরের গড় হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত থেকে পাচার হয়েছে ৫৫ হাজার ৭ কোটি ডলার। এ ছাড়া ওই সময়ে শ্রীলংকা থেকে ২ হাজার ৩২৩ কোটি, নেপাল থেকে ৫২৫ কোটি, পাকিস্তান থেকে ৫ হাজার ৮৯৫ কোটি, আফগানিস্তান থেকে ১১ হাজার ৭৯৬ কোটি ডলার পাচার হয়।