নুসরাতের কবরের ফুল শুকালেও শুকায়নি মায়ের চোখের পানি

গত এক মাসে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলার অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়েছে। প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজসহ মামলার সব আসামি গ্রেফতারসহ এখন পর্যন্ত ১২ জন তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। তবে এখনও তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ নুসরাতের পরিবারের।

নুসরাতের কবরের দেয়া ফুলগুলো শুকিয়ে গেলেও শুকায়নি নুসরাতের মায়ের চোখের পানি। মৃত্যুর মাস পার হতে চললেও নুসরাতের স্মৃতি বুকে নিয়ে এখনও শোকে কাতর পরিবার।

ছোট ভাই বলেন, আমার বোনের কোন আসামিরা যেন প্রভাব খাটিয়ে বাঁচতে না পারে।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হয়। আর এই ক্ষোভেই ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত পা বেঁধে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন নুসরাতের ভাই নোমান। এরমধ্যে ৫ দিন বাঁচার জন্য লড়াই করে ১০ মার্চ ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রতিবাদের প্রতীক নুসরাত।

একই দিন মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই এর ওপর। ১৪ এপ্রিল নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার মুখোশ উন্মোচিত হয়। তা প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং দণ্ড কার্যকর করা। এছাড়াও অথচ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নুসরাতের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার হোতা সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমকে এখন গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ নুসরাতের পরিবার ও এলাকাবাসীর।

বাদী পক্ষের এই আইনজীবী মনে করেন, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পিবিআইকে সতর্কতার সাথে নিখুঁত চার্জশিট গঠন করতে হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান শাজু বলেন, আসামিরা যেন আইনি প্রক্রিয়ায় বের হতে না পারে সেজন্য যে আসামিরা জবানবন্দি দিয়েছে, সে জবানবন্দিগুলোকে কঠিনভাবে পর্যালোচনা করে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলেই মামলার কাজ দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

আর পিবিআই’র এই কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

পিবিআই এসএসপি মো. ইকবাল বলেন, সকল আলামত জব্দ করা হয়েছে। আলামত সংশ্লিষ্ট জায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের মতামত গ্রহণ করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। যে সময় বলা হয়েছে সে সময়ের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারবো।

নুসরাতের মৃত্যুর পর গত এক মাসে পিবিআই এজাহারভুক্ত ৮ জনসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ ৭জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্যও আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত বোরকা, গ্লাসসহ বেশকিছু আলামতও উদ্ধারের কাজ শেষ। আর দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানায় পিবিআই।-সময়টিভির সৌজন্যে।