ন্যাটোর সদস্যপদ চায় ফিনল্যান্ড, ক্ষুব্ধ রাশিয়া


ন্যাটোতে যেগদানের জন্য শিগগিরই আবেদন করবে ফিনল্যান্ড। দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো ও প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেওয়ার পর ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ভারসাম্যে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রদিবেদনে বলা হয়, ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনে আগ্রাসন করার মাধ্যমে পশ্চিমা সামরিক জোটের সম্প্রসারণ ঠেকানো। কিন্তু এখন এর বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ন্যাটোর সম্প্রসারণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্নায়ু যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ থাকা স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দুটি দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হবে। ফিনল্যান্ডের ঘোষণা ইতোমধ্যে ক্রেমলিনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তারা জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার জন্য সরাসরি হুমকির।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ফিনদের উষ্ণভাবে স্বাগত জানানো হবে এবং তাদের মসৃণ ও দ্রুত যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ফিনিশ সদস্যপদ ফিনল্যান্ডের এবং জোটের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।
ইইউ ভূক্ত দুটি বৃহত্তম দেশ ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন এখনও ন্যাটোতে যোগদান করতে পারেনি।
ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট এবং রাশিয়ার মধ্যকার সীমান্তের দ্বিগুণেরও বেশি হবে। সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর উপকণ্ঠ থেকে ন্যাটো রক্ষীরা কয়েক ঘণ্টা পথ দূরে অবস্থিত।
ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগদান রাশিয়ার জন্য সরাসরি হুমকির কারণ কিনা জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন— অবশ্যই, ন্যাটোর সম্প্রসারণ আমাদের মহাদেশকে আরও অস্থিতিশীল এবং অনিরাপদ করবে।
রাশিয়ান কর্মকর্তারা অতীতে বাল্টিক সাগরে সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলেছেন।
বুধবার ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান রাশিয়াকে উস্কে দেবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে নিনিস্তো বলেন— আমার প্রতিক্রিয়া হবে যিনি (পুতিন) এটি ঘটিয়েছে, তিনি আয়নার দিকে তাকান।
পাঁচজন কূটনীতিক এবং কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ন্যাটো মিত্ররা আশা করছে উভয় দেশকে দ্রুত সদস্যপদ দেওয়া হবে। এক বছরের অনুসমর্থন সময়কালে নর্ডিক অঞ্চলে তাদের রক্ষার জন্য বর্ধিত সেনা উপস্থিতির পথ প্রশস্ত করবে।
পুতিন ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার প্রধান কারণ হিসেবে ন্যাটোর সম্ভাব্য সম্প্রসারণকে উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছিল, যদিও এটি সম্প্রতি শান্তি আলোচনার অংশ হিসাবে কিছু নিরপেক্ষ অবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
ন্যাটো নিজেকে একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট দাবি করে বলেছে, একটি চুক্তি কেন্দ্র করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ন্যাটোর একজন সদস্যের ওপর আক্রমণ মানে সকলের ওপর আক্রমণ।
কিন্তু কার্যকরভাবে এটি মূলত পারমাণবিক অস্ত্রাগারসহ মার্কিন মিত্রদের এবং আমেরিকান পরাশক্তির সুরক্ষা প্রদান করে।
মস্কো ন্যাটোকে প্রতিবেশী দেশগুলির ওপর তার প্রভাব বিস্তারের হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নর্ডিক অঞ্চলে জনমতের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। যেসকল রাজনৈতিক দলগুলো প্রজন্ম ধরে নিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে আসছিল তারাই এখন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে রাশিয়াকে বিপদ মনে করছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন