পঞ্চগড়ে শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ: তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়নের আদেশ ডিটিই’র

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক এমপিও পাওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতার অফিস আদেশ জারিসহ তা স্থগিত রেখে তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়নের আদেশ করেছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিটিই)।
গত সোমবার (৫ মে) ৫৭.০৩.০০০০.২৮.০০৩.১৭-২০২৫-৩০৬ নং স্বারকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইডব্লিউ) রুটিন দায়িত্ব প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন পত্রে এই কথা বলা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন প্রসঙ্গ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার এবং ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাঁর এলাকা হতে প্রাপ্ত একটি অভিযোগ মহাপরিচালক বরাবরে আগ্রায়নপত্রসহ প্রেরণ করেন।
অপরদিকে তরিকুল ইসলামও জিআরএস মাধ্যমে একটি অভিযোগ প্রেরণ করেন। উভয অভিযোগকারী ওই শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেন। এরই প্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালককে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন চলতি মাসের আগামী ২০ তারিখের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে বলেন।
উল্লেখ্য যে, গত সোমবার বেলা ১১ টায় উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের সাম্প্রতিক এমপিও বাতিল চেয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এসময় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে এলাকাবাসী বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান নিজেই নিয়মিত কলেজে আসেননা। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের বিনিময়ে অবৈধভাবে ৫ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কলেজের দাঁড়েও আসতে দেখেননি তাঁরা। শুধু তাই নয়, যে প্রধান শিক্ষকের থাকার মত উপযুক্ত জায়গা ছিলনা সে আজ অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে পঞ্চগড়ে গড়ে তুলেছেন বাসা বাড়ী।
অনতিবিলম্বে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ শিক্ষকের এমপিও বাতিলসহ বিদ্যালয় মাঠে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত অংশীদারদের জমিজমা বুঝে দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদার দাবি তুলে ধরেন তাঁরা।
জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। যার কলেজ কোড নং ১১০২৩ ও ই.আই.আই.এন নং হচ্ছে ১৩২৮৫৩। প্রথমে বৈধতার সাথে গত ২০০৬ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ ৯জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পেলে দ্বিতীয় বার ওই সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখে ৫জন শিক্ষককে অবৈধ কাগজপত্রের প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেখানো সাম্প্রতিক এমপিও প্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিমল কুমার রায়, কম্পিউটার আপারেশন বিষয়ের প্রভাষক সফিকুল আলম, সাচিবিকবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক দিলিয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক দিলারা বেগম এবং নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক/কম্পিউটার অপারেটর উম্মে বিনতে সালমা।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান বলেন, কেউ অভিযোগ করতেই পারে। ছয় সালের নিয়োগই ফাইনাল।
জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আগে যে তদন্ত করা হয়েছে এমনটি বলতেই তিনি বলেন, সেই তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিষ্ঠানে না গিয়েই তদন্ত করেছেন। তিনি গত মাসের ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, অফিসের কাজে কলেজে আসতে পারেননি।
কোনো ছুটি না নিয়েই ছয়দিন অনুপস্থিত কেন থাকলেন? উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষের কোনো অনুমতি লাগেনা। অধ্যক্ষ যেখানেই যাবেন সেখানেই অফিস। অন্যান্য কোনো কলেজেই হাজিরা দিতে হয়না। আমিই এটি চালু রেখেছি। তিনি আরও বলেন, বেতন না হওয়ার সেই পাঁচ শিক্ষক কলেজে আসেননি। বেতন-ভাতা পেলেই কলেজে আসা শুরু করবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তিনি ওই বিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সেটির সঙ্গে আগের তদন্ত রিপোর্টসহ কারিগরি অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন