পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটনের দাবী বোনের

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বড় ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছোট বোন মৃদুলা দেবনাথ।

সোমবার (৩ এপ্রিল) বেলা বারোটায় কলাপাড়া রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৃদুলা দেবনাথের পিতা রবিন দেবনাথ, মাতা কল্পনা রানী ও মামাতো ভাই শংকর দেবনাথ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে মৃদুলা লিখিত বক্তব্য পাঠের মধ্যেদিয়ে বলেন, কলাপাড়া পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসীন্দা রনজিৎ দেবনাথ তার বড় ভাই ছিলেন। তার জীবুদ্দশায় ২০২০ সালে মাদারীপুরের রাজৈর এলাকার বরীন্দ্রনাথ বাড়ৈর মেয়ে পদ্মা রানী বাড়ৈর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে পরিবারের অজান্তে ২০২১ সালের ০৬ জানুয়ারী কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। এরপর ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে বসবাসরত তাদের ঘরে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরে রনজিৎ জয়পুরহাট রুরাল ডেভলপমেন্ট মুভমেন্টে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকুরির সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। তবে রনজিৎ তার স্ত্রী সন্তানকে নিজের বাড়িতে থাকতে বললেও কোন ভাবেই রাজি হয়নি স্ত্রী পদ্মা রানি। উল্টো রনজিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়। কিন্তু বড় বিপত্তি বাঁধে রনজিতের মাকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেয়াকে কেন্দ্র করে।

এবছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী রনজিৎ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তার মাকে একটি মোবাইল কিনে পাঠায়। এর পরই রনজিতকে মানসিক অত্যাচার শুরু করে পদ্মা রানি। শ্বাশুড়িকে কল দিয়ে মোবাইল ফেরৎ চান তিনি। বক্তব্যে আরো বলেন, রানী নিজে মাথা ফাটিয়ে এবং হাত কেটে রনজিতের ম্যাসেঞ্জারে ছবি পাঠায়। তখন রনজিৎ ঢাকায় তার অফিসিয়াল কাজে মিটিংয়ে ছিলো। মূলত এ মোবাইলের সূত্র ধরেই রনজিতকে রহস্যজনক ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন মৃদুলা। মৃদুলা বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারী সকালে রনজিৎ ঢাকা থেকে জয়পুরহাট এসে পৌঁছায়। রাতে তার মৃত্যু হয়। তখন পদ্মা রানি ঘরেই ছিলো। মৃদুলার দাবি, রনজিতের মৃত্যু অনেকটা রহস্যজনক হয়েছে। তার গলাতে ওড়না প্যাচানো থাকা অবস্থায় তার পা একটা ফ্লোরে আরেকটা পা খাটের উপরে ছিলো। সে সম্পূর্ন ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলোনা। যখন তার স্ত্রী চিৎকার করে বাড়িওয়ালী সবার প্রথমে আসে। সে এসে দেখতে পায় ফ্যানের একটি পাখার সাথে ওড়না বাধা। তার ভাষ্যমতে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এছাড়া রনজিতের গলায় কোন রশির দাগ ছিলোনা। তার জিব্বা বের করা ছিলোনা। তবে তার গলাতে আঘাতের দাগ, বুকে কামড়ের দাগ এবং কিডনি বরাবর আঘাতের দাগ ছিলো। মৃতদেহ গোসল করানোর সময় এ দাগ বেশির ভাগ মানুষই দেখেছে বলে দাবী তার।

মৃদুলা অভিযোগ করেন, মারা যাওয়ার পর রনজিতকে ময়নাতদন্ত করাতে রাজি ছিলোনা তার স্ত্রী ও শ্বশুর। পরে জয়পুর হাট সদর থানা থেকে পটুয়াখালী প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা ময়নাতদন্ত করে লাশ পাঠানোর কথা বলে। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত শেষে কলাপাড়ায় লাশ পাঠানো হয়। তবে এখনো বের হয়নি ময়না তদন্তের রিপোর্ট।

বর্তমানে রনজিতের ভাড়া বাসায় যে সকল মালামাল ছিলো সেগুলো সব আত্মসাত করেছে তার স্ত্রী এবং শ্বশুর। রনজিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তার স্ত্রী পদ্মা রানী। সবার মোবাইল নম্বর ব্লাক লিষ্ট করে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে রনজিতের বাবা, মা এবং বোন জামাইকে মারধরের হুমকি দেয়া হচ্ছে অচেনা নম্বর থেকে। জয়পুর হাট রুরাল ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের বর্তমান প্রকল্প ব্যবস্থাপক স্বপন খালকো জানান, রনজিত স্যারের পরিবার আমাকে দোষারুপ করতে পারে। কিন্তু বিষয়টি আমরা থানায় হ্যান্ডওভার করেছি। থানা তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে মালামাল বুঝিয়ে দিয়েছে।

এবিষয়ে রনজিতের স্ত্রী পদ্মা রানী বাড়ৈর মুডোফোনে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। রনজিতের শ্বশুর রবিন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, রনজিত ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। তাকে তার বাবা মা ব্যাপক প্রেসারে রেখেছেন। রনজিতের কাছে ওই এনজিও ৯০ হাজার টাকা পেতো। সেসব টাকা পরিষোধ করে থানার মাধ্যমে আমার মেয়ে মালামাল নিয়ে এসেছে। আর আমার মেয়ে যদি রনজিতকে কিছু করে থাকে তাহলেতো সেটা পোষ্টমর্টেমে বেড়িয়ে আসবে। বর্তমানে রনজিতের বোন জামাই রাহুল আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।