পাঁচ বছরে ঋণের সুদে ব্যয় দুই লাখ কোটি টাকা
বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে। বাড়ছে এর অর্থনীতির সামর্থ্য, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকার তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবও বাড়াচ্ছে। তবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক বেশি হওয়ায় সরকার ধারের ওপর নির্ভর করছে। অবশ্য তা জিডিপির নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মোতাবেক, কোনো দেশ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি বাজেট দিলে ধরে নিতে হয় তার আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টানা পাঁচটি বাজেটে সব মিলিয়ে ধারের সুদ বাবদ সরকারকে ১ লাখ ৯১ হাজার ৯২৩ কোটি পরিশোধ করতে হয়েছে, যা আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদের বাজেটের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ঋণের সুদ পরিশোধে একটি পুরো বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ চলে গেছে; যার বড় অংশই গেছে আবার বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে। আর এ সুদব্যয় প্রতি বছরই বেড়েছে।
নির্বাচনের বছরে ভোটার তুষ্টির চেষ্টায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন হিসেবে আনলে বাজেটের আকার দাঁড়াবে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের ঋণের পরিমাণ মোট বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ।
সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে দুটি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। একটি অভ্যন্তরীণ, অন্যটি বৈদেশিক। বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নেয়। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ধার নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ উৎসে ট্রেজারি বন্ড, অনির্দিষ্ট ঋণ, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরাসরি ঋণের মাধ্যমে সরকার তার বাজেট ঘাটতি পূরণ করে। হিসাব বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে গেছে ৩০ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বেশি এবং মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সুদে ব্যয় হয় ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ গেছে সুদে। এর মোট পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছর থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়েছে; যা বাজেটের ১৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। চলতি বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, তাতে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের (পরিচালন ও উন্নয়ন) ১১ দশমিক ১ শতাংশ অর্থ যাবে ধারের সুদ পরিশোধে, যা পরিচালন বাজেটের ১৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেট ঘাটতি নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে এটি ঠিক। তবে সরকার ঘাটতি পূরণ করতে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে। এ কারণে বড় আকারের সুদ দিতে হচ্ছে প্রতিবছর। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। ঋণ নিয়ে যেনতেনভাবে ব্যবহার করা দুঃখজনক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন