পাকিস্তানে টিভি চ্যানেল, ফেসবুক-টুইটার বন্ধ

সহিংস বিক্ষোভে উত্তপ্ত পাকিস্তানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও এসব সামাজিক মাধ্যম খুলে দেয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে সে ইঙ্গিত মিলছে না।
.
ফাইজাবাদের অবস্থান কর্মসূচি বন্ধে চলমান অভিযান সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শনিবার বিকেলে নোটিশ জারি করে পাকিস্তান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি (পেরমা)।

এর পরপরই অধিকাংশ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় (অফ-এয়ারে চলে যায়)। ‘পেরমা’র নির্দেশনার কারণে চ্যানেলের সম্প্রচার স্থগিত’- কয়েকটি চ্যানেলে এমন বার্তা প্রচার করা হয়।

এছাড়া দেশের বেশ কিছু অংশে ফেসবুক, ইউটিউবে, ডেইলি মোশন, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

পেরমা’র মুখপাত্র জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরই চ্যানেলগুলো সম্প্রচার শুরু করতে পারবে। তবে কতক্ষণ নাগাদ এই সম্প্রচার বন্ধ থাকবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি’র (পিটিএ) একটি সূত্র ডন-কে জানায়, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির স্পর্শকাতর অবস্থা বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিক্ষোভস্থল এবং এর আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলেও জানায় পিটিএ।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার স্থগিতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অল পাকিস্তান নিউজ পেপারস সোসাইটি (এপিএনএস)। আর সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ নাগরিকরা।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীকে যে শপথ নিতে হয় তাতে সংশোধনী এনে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নাম সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তেহরিক-ই-লাবায়েক ইয়া রাসুল্লাহ পাকিস্তান (টিএলওয়াই)।

বিক্ষোভকারীরা এটিকে ব্লাসফেমি আইনের সঙ্গে জড়িয়ে আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের পদত্যাগ দাবিতে গত ৬ নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন। অথচ এর আগেই এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলা হয়, এটি একটি ছোট্ট ভুল যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীর কারণে হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজধানী ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মেট্রো বাস চলাচল বন্ধ ছিল আন্দোলনের শুরু থেকেই। ফলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ আসতে থাকে। এমনকি আদালত এই আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করে।

সরকারও দফা দফায় বিক্ষেভাকারীদের সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়। কিন্তু শনিবার ছিল শেষ আল্টিমেটাম। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভকারী না সরায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

এতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পুলিশসহ বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন।
ইসলামাবাদের বাইরে করাচি ও লাহোরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা তলব করে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সেনাদের রাস্তায় দেখা যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।