পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন যেন নামহীন স্টেশন

দেশের সব রেলওয়ে ষ্টেশনে শুরু ও শেষ প্রান্ত ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্হানে নাম লেখা থাকে। ফলক দেখে যাত্রীরা বুঝতে পারে ট্রেনটি কোন ষ্টেশনে থামলো। অথচ ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন পশ্চিমাঞ্চল রেলের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন নামফলকহীন অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। শ্রেণীগতভাবে প্রথম শ্রেণিভূক্ত ঈশ্বরদী জংশনের পরিচয়হীনতা এখন বড় দায়। ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনের কোথাও কোনো নাম ফলক নেই। দুর-দুরান্ত থেকে ঈশ্বরদী স্টেশনের ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানতেই পারে না এটা শতাধিক বছরের পুরান ও ঐতিহ্যবাহী একটি স্টেশন।

জানা গেছে, ১৮৭৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়ার দামুকদিয়া (পদ্মা নদীর দক্ষিণ) ঘাট এবং ফেরি পার হয়ে সাঁড়াঘাট দিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন প্রতিষ্ঠা করে।

১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ হলে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ছয়টি রুটে প্রতিদিন প্রায় ১৮টি ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে যশোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর বিভিন্ন রুটে চলাচল করতো যার বেশির ভাগই ছিল মালবাহী। সে সময় এ স্টেশন দিয়ে দিনে হাজারের অধিক মানুষ যাতায়াত করতো। বর্তমানে ঈশ্বরদী স্টেশনের চারটি প্লাটফর্মে প্রতিদিন ৩৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ১০টিসহ মোট ৪৫টি ট্রেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। এছাড়াও ভারতে সাথে দুটি মৈত্রী ট্রেনও এ স্টেশন হয়ে যায়।

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের চারটি প্লাটফর্মের কোনটিতেই ‘ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন’ নামের কোনো ফলক নেই। স্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মের চালার সামনে হালকা রঙে লেখা থাকলেও সাদা রঙ দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।

খুলনা থেকে আসা যাত্রী মিজানুর রহমান জানায়, অনেক আগে একবার ঈশ্বরদীতে এসেছিলাম। অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বুঝতে পারছিলাম না এটিই ঈশ্বরদী স্টেশন কিনা। স্টেশনের কোথাও নামের কোনো নামফলক নেই, যে সেটা দেখে নেমে যাবো। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েছি যে, এটিই ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন।

চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রী মসলেম মল্লিক ঢাকা যাচ্ছিলো। সে জানায়, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম রেল স্টেশন ঈশ্বরদী জংশন। দীর্ঘদিন দেখে আসছি স্টেশনের নাম ফলকটি হাওয়া হয়ে গেছে। মানুষ কীভাবে বুঝবে এটিই ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন?

স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট মহিবুল ইসলাম জানায়, প্লাটফর্মের উন্নয়ন কাজ করতে সমস্যা হওয়ায় ‘ঈশ্বরদী জংশন’ লেখা পিলারটি তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পিলারটি আর স্থাপন করা হয়নি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবো। পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জানায়, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নেম বোর্ড বসানোর মতো জায়গা পাচ্ছি না। প্লাটফর্মের কোনপাশে নেমবোর্ড বসালে সুবিধা হয় তা ঠিক করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।