পাবনার বেড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!
পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরাদ্দকৃত ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৩ টাকা ৭০ পয়সার হদিস মিলছে না।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তদন্তে অর্থ আত্মসাৎ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় পাবনা জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়টি অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও অদৃশ্য শক্তির কারণে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার মাশুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যানের অনুকূলে ১৪১৭ থেকে ১৪২১ বাংলা সাল পাঁচ বছরের ঘাট ইজারার আয় থেকে বেড়া উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে বিভাজনকৃত অর্থের মধ্যে তিনটি চেকের মাধ্যমে ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৩ টাকা ৭০ পয়সা ইউনিয়ন পরিষদকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বরাদ্দকৃত অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য পরিষদের নামে ব্যাংক হিসাবে জমা রেখে চেয়ারম্যান ও সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে চেকের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে ব্যয়ের বিধান রয়েছে।
কিন্তু সেই সময়ের ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদুল হক নিজের নামের আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে ওই অর্থ জমা রেখে ইচ্ছাকৃত ব্যয় দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যার সত্যতা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে পাওয়া গেছে।
ইউপি সচিবের ব্যাখ্যা ও প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক মাশুমদিয়া শাখায় ‘চেয়ারম্যান মাশুমদিয়া ইউনয়ন পরিষদ বেড়া, পাবনা’ শিরোনামে চেয়ারম্যান ও সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হিসাব নং-১১৫ চালু থাকা সত্ত্বেও গত ১৪১৭ হতে ১৪২১ বাংলা সন পর্যন্ত ইজারাকৃত ঘাটের আয় বাবদ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ২৩/৯/২০১৪ তারিখে ৮০৪৩৯৯৫ নং ক্রস চেকের মাধ্যমে ৭,৭২,০১৩ টাকা, ১৭/১১/১৪ তাং-৮০৪৫৭৩২ নং ক্রস চেকের মাধ্যমে ৬,৬৮,০০৮/৮২ টাকা ও ০২/১২/১৪ তাং ৮০৪৫৭৪১ নং ক্রস চেকের মাধ্যমে ৮,৮৫,৭৪১,৮৮ টাকাসহ সর্বমোট ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৩ টাকা ৭০ পয়সা বরাদ্দ পায়।
সেই বরাদ্দকৃত অর্থ মাশুমদিয়া ইউপি সচিবকে না জানিয়ে ওই সাবেক চেয়ারম্যন অগ্রণী ব্যাংক ত্রিমহোনী শাখা, পাবনাতে চেয়ারম্যান মাশুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, বেড়া, পাবনা শিরোনামে একক নাম ও স্বাক্ষরে নতুন আরেকটি চলতি হিসাব খোলেন। সেখানে তিনি উল্লিখিত তিনটি চেক জমা দেন এবং একক স্বাক্ষরে ইচ্ছামত টাকা উত্তোলন করে ব্যয় দেখান। যা আইন বিরোধী কাজ।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত অর্থ দিয়ে গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই মাটির কাজ দেখানো হয়েছে। এছাড়া দৃশ্যমান কোনো প্রকল্প খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. শহিদুল হক ঘাট ইজারার সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা তসরুফ করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার একই চিত্র খুঁজে পেয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বর্তমান মাশুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিরোজ হোসেন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব পালনকালে এ অনিয়ম করেছেন। বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে সাধারণ জনগণের উন্নয়ন কাজের টাকা আত্মসাৎকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ অর্থ দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের উন্নয়নমূলক কাজ করা যেত। তাই আশা করি, আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিষদের অর্থ ফেরতসহ তার বিরুদ্ধে কঠিন আইনগত ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্টরা। যাতে এ ধরনের কাজ অন্য কোনো চেয়ারম্যান করতে সাহস না করেন।
এ ব্যাপারে মাশুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল হক বলেন, উপজেলার পরিষদ থেকে সেই সময় এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট করা হয়েছিল। পরে নিদের্শনা পেয়ে সচিব ও আমার যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব খুলে বরাদ্দকৃত টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে। কোনো অর্থ আত্মসাৎ করা হয় নাই।
ঘটনার বিষয়ে বেড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. সবুর আলী বলেন, এ ঘটনা আমি আসার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি ভালো জানেন। তবে সাবেক চেয়ারম্যানের নামে অর্থ আত্মসাতের অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যেসব কাজপত্র চেয়েছিল, সেগুলো আমরা পাঠিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তদন্ত শেষে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন