পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নকল ঘি তৈরীর কারখানার সন্ধান

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পামওয়েল ও ডালডার সাথে ‘ঘি’ এর কৃত্তিম সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরি করা হয় নকল গাওয়া ঘি। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মণ পরিমান এই নকল ঘি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চটকদার মোড়কে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। গভীর রাত হলেই একাধিক পিকআপ ভ্যান এসব ঘি নিয়ে যায়।

ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের হাড়োপাড়া মহল্লায় শনিবার (১৯ আগস্ট) মধ্যরাতে এমন একটি নকল ঘি তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ কারখানায় গিয়ে এসব নকল ঘি তৈরির উপকরণ সনাক্ত করেন।

এর আগে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ভেজাল ঘি এর কারখানার বিষয়টি জানালে তিনি পরদিন দেখবেন বলে জানান।

জানা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের শরৎনগর-ভবানীপুর সড়কের পাশে হাড়োপাড়া ও ভবানীপুর গ্রামে অন্তত ২০টি ঘি ও ছানা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একইসঙ্গে রয়েছে প্রায় অর্ধশত দুগ্ধ খামার ও অনলাইনে গরু বিক্রির খামার। তাই এই এলাকাটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা গরু ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য কিনতে আসেন।

দেশে পাবনার ঘি এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ঘি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বাজারজাত করে আসছেন। একই সাথে এলাকার অনেক দুগ্ধ খামারি সয়াবিনের তেল, চিনি ও কস্টিক সোডা মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে বিক্রি করছেন।

গত ছয়মাস আগে এমন নকল দুধ প্রাণ কোম্পানিতে সরবরাহের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত ভবানীপুর গ্রামের শামীম আহমেদ নামে এক দুগ্ধ খামারিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন।

এদিকে শনিবার রাত ১১টার দিকে হাড়োপাড়া মহল্লায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ আলী হাড়োপাড়া মহল্লায় আব্দুল খালেকের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘি ও ছানা তৈরির কারখানা এবং দুগ্ধ সংগ্রহ ও শীতলকরণ কেন্দ্র করেছেন। ওই কারখানায় বিপুল পরিমাণ পামওয়েল, ডালডা ও তৈরিকৃত নকল ঘি পাওয়া যায়।

এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে কারখানার ব্যবস্থাপক ওয়ালিদ হোসেন নকল ঘি ও উপকরণ কারখানার পেছনের গেট দিয়ে সরিয়ে ফেলতে শুরু করে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ইউএনওকে জানালে তিনি রাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না বলে জানান। পরে এসব নকল ঘিয়ের ছবি জেলা প্রশাসককে পাঠিয়ে অবগত করা হয়। পরে রাত বারোটার দিকে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল ইসলামসহ পুলিশের একটি টিম আসলে পালিয়ে যান ওয়ালিদসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। তবে পুলিশ সে সময় কারখানায় গিয়ে ডালডা, নকল ঘি এবং ব্লেন্ডার মেশিন পান।

ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগ নামে এক ব্যক্তির একটি কারখানায় ডালডা সহ নকল ঘি তৈরির উপাদান পাওয়া যায়। তবে আমরা পৌঁছানোর আগেই কারখানার ব্যবস্থাপক সহ অন্যরা পালিয়ে যায়। এখন ঊর্ধ্বতন দপ্তরের পরামর্শে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ওই কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হতে পারে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, আমি রাতের বেলায় যেতে পারবো না। এত পরিশ্রম করতে পারবো না। তাই ওই নকল ঘিয়ের কারখানায় যেতে পারবো না। এত রাতে এসিল্যান্ডকে বলাও যায় না। বিষয়টি পরে দেখা যাবে।

নকল ঘি ও উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরিয়ে নিলে নিয়ে যাক। এমনিতেই যদি কারখানার মালিক ভালো হয়ে যায়, তবে হোক।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তাসমীয়া আক্তার রোজী চলনবিলের আলোকে বলেন, দুপুরের দিকে কারখানায় গিয়ে সব কিছু দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা কবে।