পাবনায় দাদনের টাকা পরিশোধে শ্রম বিক্রি করছেন ইটভাটা শ্রমিকেরা! লাভবান মালিকরা

পাবনার চাটমোহরের ইট ভাটা শ্রমিকেরা দাদনের অগ্রীম টাকা নেওয়ায় শ্রম বিক্রি শুরু করেছেন। জৈষ্ঠ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ ৫ মাস ইটের ভাটায় শ্রমিকদের কাজ থাকে না। এসময় অন্য কাজও কম থাকে। ভাটা শ্রমিকদের কেউ কেউ এসময় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যান কাজের সন্ধানে আবার অনেকে বেকার থাকেন।

এ সময় পরিবার পরিজন নিয়ে চলা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। এ সুযোগটা নিয়ে থাকেন ইট ভাটা মালিকরা। এসময়ে তারা কম টাকা দিয়ে শ্রমিক সরদারদের মাধ্যমে অভাবী ইট ভাটা শ্রমিকদের শ্রম অগ্রিম (দাদনে) কিনে থাকেন।

ইট ভাটায় ইট তৈরীর কাজ শুরু হলে এসব শ্রমিকরা দাদন প্রদানকারী ভাটা মালিকের ভাটায় কাজ করে দিতে বাধ্য থাকেন। যারা দাদন নেন না তারা বেশি পারিশ্রমিক পেলেও একই কাজ করে কম দর পান দাদন নেওয়া শ্রমিকেরা। অধিকাংশ ভাটা শ্রমিক বছরের পর বছর এমনভাবে ঠকছেন আগাম শ্রম বিক্রি করে।

পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ইট ভাটা শ্রমিক সরদার আবু হানিফ চাটমোহর রেলবাজার এলাকার আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুসের কে.এস.বি ইট ভাটায় কাজ করেন। তার অধীনে ২২ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ২২ জনই দাদনের টাকা নিয়েছেন বলে জানান তিনি। জৈষ্ঠ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের দাদনের টাকা দেন ইট ভাটা মালিকরা। যে সকল শ্রমিক ইট প্রস্তত করেন তারা ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাদন নেন। যারা যোগানদার তারা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাদন নেন।

যারা দাদন নেন না প্রতি হাজার ইট প্রস্তুত ও শুকানো বাবদ তারা ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। যারা দাদন নেন সমান কাজ করে তারা পান ৪৫০ টাকা। দাদনের টাকা সাপ্তাহিক বিলের সাথে কর্তন করে রাখেন ইট ভাটা মালিকরা। দাদন গ্রহনকারীরা প্রতি হাজার ইটে ২৫০ টাকা কম পান। অনেক শ্রমিক এক ইট ভাটা মালিকের থেকে দাদনের টাকা নিয়ে অন্য ভাটায় কাজে চলে যান। তখন বিপাকে পরতে হয় শ্রমিক সরদারকে।

দোলং গ্রামের ইট ভাটা শ্রমিক সরদার আব্দুস ছালাম বওশা এলাকার একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। তিনি জানান, তার অধীনে যে ষোলো জন শ্রমিক কাজ করেন তাদের প্রত্যেকেই ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাদন নিয়েছেন। এখন কাজ করে দাদনের টাকা শোধ করছেন তারা।

চাটমোহরের দোলং গ্রামের মৃত ওয়ারেছ আলীর ছেলে কিশোর মোবারক হোসেন বেড়হাউলিয়া এলাকার একটি ইটভাটায় কাজ করেন। এখন থেকে ৫ মাস আগে ১২,৫০০ টাকা দাদন নিয়েছেন তিনি। এখন দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরায় কাজ করছেন তিনি। তার সমবয়সী অন্যরা যারা দাদনের টাকা নেননি তারা দৈনিক ৩৫০ টাকা পাচ্ছেন।

চাটমোহর উপজেলা ইট ভাটা শ্রমিক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন জানান, মহাজনদের কাছে আমরা সব সময় জিম্মি থাকি। সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে, সাদা চেক জমা দিয়ে মহাজনদের নিকট থেকে টাকা এনে আমরা শ্রমিকদের দাদন দেই। শ্রমিকরা দাদন নিয়ে কাজ না করলে আমাদের ভোগান্তিতে পরতে হয়। পাশাপাশি দাদন নেওয়ার কারণে আমরা সংশ্লিষ্ট ইট ভাটায় কাজ করতে বাধ্য থাকায় আমরা কম পারিশ্রমিক পাই।