পাবনায় দুই স্কুলছাত্রীর গণধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে, মামলা
পাবনার সুজানগরে দুইস্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ইন্টারনেটে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ করায় ৬ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্যাতিতারা বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। রবিবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. ইমরান হোসেন চৌধূরী মামলাটি গ্রহণ করেন।
অভিযুক্তরা সবাই সুজানগর পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ্ব্দুল ওহাবের কর্মী সমর্থক বলে জানা গেছে।
মামলার আইনজীবী রাজিউল্লাহ সরদার রঞ্জু বলেন, সুজানগর থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় আজ রবিবার মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করায় আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করছি।
মামলার বিবরণে তিনি জানান, সুজানগর পৌর এলাকা চর ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রী গত ১ আগস্ট বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ৬ বখাটে চর ভবনীপুর মাস্টার পাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা মিলে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে তাদের তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নিকিরী পাড়ার একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা জোরপূর্বক পালাক্রমে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে তার ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। দুই ছাত্রী বিষয়টি ভয়ে গোপন রাখে। ঘটনার কয়েক দিন পর পুনরায় ভিডিওচিত্র দেখিয়ে পুনরায় কু-প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা প্রত্যাখান করলে বখাটেরা ওই ভিডিওচিত্রটি ফেসবুকে আপলোড করেল মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিষয়টি জানা জানি হলে ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে ওই দুই ছাত্রীর দারিদ্র্য পিতা-মাতা বিচার দাবি করলেও তিনি কৌশলে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তারা আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান আইনজীবী রাজিউল্লাহ সরদার রঞ্জু।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার দুই ছাত্রী বলেন, এই ঘটনার পর থেকে বখাটেদের মুখে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে ওই দুই ছাত্রীর পিতামাতা জানান, আমরা গরিব মানুষ, বখাটেরা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তান ও পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ায় থানা পুলিশ ও মেয়রের নিকট আমরা কোন বিচার পাইনি। এ ঘটনার পর থেকে আমারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আদালতের নিকট বখাটেদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।
সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, বখাটেরা পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ার কারণে থানা মামলাটি গ্রহণ করেনি। আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি তাদের। এই ঘটনার পর থেকেই ওই দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করি।
এ প্রসঙ্গে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ কেউ আমাদের নিকট নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধাারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে দুটির অভিভাবকরা আমার নিকট এসেছিল। এটা নিয়ে কয়েক দফা সালিশি বৈঠকও হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
বখাটেরা তার কর্মী-সমর্থকের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, তারা আওয়ামী লীগ পরিবারের ছেলে হলেও তারা আমার লোক নয়। এ ঘটনার সাথে আমাকে জড়িয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন