পাবনায় ধানের দামে হতাশ চাষীরা


পাবনায় এখন যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে হতাশ চাষীরা। কারণ উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তাদের লাভ থাকছে না। এতে করে ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক কৃষক। ফলে আগামীতে পাবনায় ধানের উৎপাদন কমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সরকারি দরে খুব সামান্য ধান কিনতে পেরেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, চাষীরা সরকারি দরের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারছেন।
জানা গেছে, ধান চাষে লাভ কমে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে পাবনায় বোরো ধানের আবাদ কমে আসছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬০ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৫৫ হেক্টরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ধানের রাজ্য বলে খ্যাত ‘বড় বিল’ এলাকার চাষীরা জানান, পানি সংকটের কারণে গত কয়েক বছর ধানে চিটা বেশি হওয়ায় ফলন কমে গেছে। এছাড়া সেচ দিয়ে ধান উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
বড় বিল এলাকার কৃষক মালেক বিশ্বাস জানান, তাদের জমিতে বিঘাপ্রতি যে ধান হওয়ার কথা সে পরিমাণ ধান তারা পাচ্ছেন না। আবার খরচ অনুপাতে তারা হাটে ধানের দামও পাচ্ছেন না। তাদের দুই দিকেই ক্ষতি হচ্ছে।
সাঁথিয়ার বিল গ্যারকা পাড়ের চাষী সাগর হোসেন বলেন, সামনে বছর আর ধান আবাদ করবো না। প্রয়োজনে মরিচ লাগাবো। এত টাকা খরচ ও পরিশ্রম করে ধান লাগিয়ে দেখা যায় আসলও উঠছে না।
পাবনার অন্যতম বড় হাট বনগ্রাম হাটে গিয়ে জানা যায়, বোরো ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে সাড়ে ১৩০০ টাকায়। আর একটু চিকন মানের ধান ব্রি-২৮ ও ২৯ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৪৫০ টাকা দরে।
ধান বেচতে আসা চাষী রফিকুল সেখ বলেন, সরকার যেভাবে তেলের দাম বাড়িয়েছে এতে চাষের খরচ বেড়ে গেছে। সারের দাম, কীটনাশকের দাম, শ্রমিকের দাম বেড়েছে। এতে ১২০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করে লাভ থাকে না। এক মণ ধানের উৎপাদন খরচই তো ১২০০ টাকা পড়ে গেছে। এ ধান যে কত কষ্ট করে বিল থেকে এনেছি তা বলে বোঝানো যাবে না।
হাটে ধান বিক্রি করতে আসা চিনাখড়ার আরেক চাষী হাচেন আলী বলেন, হাটে এক মণ ধান আনতে গাড়ি ভাড়া- খাজনা দিতেই ৫০ টাকা চলে যায়। ধান বেচে বাজারতো দুরের কথা নুন কেনার পয়সা হয় না। ডিজেল, সার, কীটনাশকের দাম বেড়েছে, শ্রমিক খরচ বেড়েছে। আমরা চলব কীভাবে?
পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান জানান, বোরো মৌসুমে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন। তারা কিনতে পেরেছেন মাত্র ৫২৪ টন। তিনি বলেন, সরকারি রেটও ভালো ছিল। কিন্তু চাষীরা তার চেয়েও ভালো দাম পাওয়ায় বাজারে ধান বিক্রি করেছেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন