গল্প

পাল্টায় তার ছায়া || নাজমীন মর্তুজা

বেশ কটা রাত জুলু ঠিক ঘুমাতে পারছে না। শুধু এপাশ-ওপাশ করেই রাত গড়িয়ে যাচ্ছে। পাশে দুধের বাচ্চাটা শুধু থেকে থেকে প্যাঁ-প্যাঁ করে চেঁচাচ্ছে কুকুরের বাচ্চাদের মতো। কি বা করবে বেচারী, ছোট মানুষ তারপর মা হারা। কোথায় মায়ের দুধে চুকচুক করে চুষতে চুষতে ঘুমিয়ে পড়তো। সেখানে চিনির সিরার ত্যানা মুখে নিয়ে আছে, দুধের সাধ কি আর গোলে মিটে! এক মনে পুচ্চকুটার হাত পা নাচিয়ে কান্না দেখছে আর ঘুরে ঘুরে ছোটবেলার রাজত্বের হিসাব-নিকাশ করছে। স্কুলের মাঠ, পদ্ম পুকুর, মন্দির, খালাতো বোনের হাসি, অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু ধাক্কা লাগার মতো কিছু বদলায়নি। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলেই বরং ভিমরি খায়; যারা গ্রামে থাকে কৃষিকাজ করে চাতলে কাজ করে, ট্রাকে মাল লোড করে ভালই তো আছে। কেউ কেউ চুল্লু, চুয়ানি, বাংলা মাল খায়, আর বুড়ি বউগুলোর উপরে হামলে পরে। শালারা আসলে বোঝেই না নয়া নয়া মালের সাথে বিছনায় যাওয়ার ফিলিংসই আলাদা! জুলু বলে -জীবনে যত মাগিরে বিছনায় নিছি! আছে নাকি আমার মতো আর একজন পাল্লা দেবে জুলুর সাথে! নারী পটাইতে পারে নাকি, সেক্স করলে আড়াইটা দিন যেন স্বপ্নের মতো যায়। আহ্ বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো জুলু। যা দিন গেছে গেছেই তা ভেবে আর লাভ কি। বাল শালার কোন মাগির মুখ’ই তো চোখের সামনে ভাসে না কেবল মমতার মুখ ছাড়া। অথচ এই শালির সাথেই আমার বেশি থাকা হয়নি। মাগি ছিল একটা, বছর বিয়ানী গাই। বছর বছর গাভিন হয়, কত্ত কইছি ধুর বাল! খালি পেট ফান্দাইস ক্যান। তুই পোয়াতি হলে আমি তো বাড়ার সুখ মিটাইতে পারি না। আজকাল শালা মাগিদের রেটও বাড়ছে। একশ টাকায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়লেও এখন দুই’শ টাকার নিচে কাপড় খোলে না। কত ক্ষুধা মিটাই শালা, পেটের ক্ষুধা, লিঙ্গের ক্ষুধা, সব দেখি খাই খাই।
কাজ কামের অর্ডারও কমে গেছে। মানুষজন কেমন যেন বেরসিক। মমতা ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকায় থাকতো। চোখে মুখে নিস্পৃহ নির্মোহ নিয়ে তার চোখে মুখে একটা নিরব প্রশ্ন ফুটে উঠতো। লোকটা কি আমাকে ভালোবাসে? ডিম ফোটা বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মনে হলো, মমতার মতো হাসছে। কোলে নিয়ে এলোপাতাড়ি আদর করতে লাগলো। বাচ্চাটা হঠাৎ জোরে কান্না শুরু করে দেয়াতে পাশের দু’জন বল্টু-মল্টুও ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না শুরু করে দিলো। এক ধমকে জুলু সবার কান্না চুপ করাতে চিৎকার করে গালি দিতে শুরু করলো শালী মরে গিয়ে আমাকে দিয়ে গেল আপদের জ্বালা। বাল শালার খানকির পুত কইলাম চুপ কর। একদম চুপ। একটা চিৎকার শুনলে কইলাম কালকেই তিন তিনডারেই এতিমখানায় থুইয়া আসবো বান্দির পুত! আমার হাড় গোড় জ্বালায় খাইলো। ওদের কান্না থামাতে গিয়ে হঠাৎ কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললো জুলু। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা কান্নার জল গড়িয়ে যেতেই নিজের চোখকে বড় অদ্ভূত লাগে। ও হঠাৎই চুপ করে যায়। হঠাৎ যেন চোখের সামনে থেকে পর্দা সরে যায়। মমতার সাথে সরলতার দিনগুলোর সঙ্গী ওকেও এই মুহুর্তে সরলতার অনুভূতি এনে দেয়।

এই জুলু নারী শরীরকে নিয়ে বদ মতলবে শরীরের বিশেষ অঙ্গকে তেল নুন মশলা দিয়ে তৈরি করে, তারপর নারী শরীর আগে চোখে মাপে, তারপর জিভের টাক্কাস তোলে, তারপর ভর্তার মতো মথলে নিজের পাঁজরের সাথে চিপে লেবুর চোকলার মতো ফেলে দেয় পলেথিনের ব্যাগের মতো পচা রঙের ডিব্বায়। নারী শরীর তার কাছে যত্ন পায় যৌনমিলনের আগে, মিলনের পর পা দিয়ে আর্বজনার মতো সরিয়ে চলে যায়, এই হলো জুলমত আলী…। ঢাকা শহরে এসে সে এখন জুলু।

পঁচিশ বছর হয়ে গেল এই ঢাকা শহরে, রংপুর ছেড়ে এসেছে জুলু, কত ঘাটেই না তার চলাচল, যৌবনের প্রথম দিকে সে একজন রাস্তার হকারের সাথে তেলাপোকা, ছারপোকা, আর ইঁদুর মারা ঔষধ বিক্রি করতো… সারাদিন শুধু রোদ্রে দাঁড়ায় থাকতে হতো। পরে মালিকের উন্নতি হলে একস্থানেই আঁকড়ায় বসতো দোকান নিয়ে, তখন সোলেমান মানে জুলুর মালিক হয়ে গেল গ্রাম্য চিকিৎসক সোলে মিয়া! তখন সোলে মিয়া আর হকারের ডাক মানে প্রোডাক্টের বিবরণ দিতেন না বসে থাকতেন… জুলুই সেই কাজ করতো … এই হলো তার মুখের পাড়া ভাঙ্গার সূচনা, তবে জুলু এখন বক টাই- ডাই কারখানার ম্যানেজার-ই বলা যায়, মাঝে মাঝে কাজ করতে করতে সে হকারের ডাক দেয় … সবাই হাসে, জুলু মজা পায়… ওর তখন মনে হয় (মঞ্চে) দাঁড়িয়ে গান শেষ হতে না হতেই দর্শকের হাত তালির শব্দ। এই তো সেদিন সব্বাই জোর করলো ও জুলু ভাই তোমার সর্দি কাশির ঔষধের ব্যবসার গানটা একটু শুনাও দেখি, জুলুর ইচ্ছে ছিল না কিন্তু কারখানায় নতুন মেয়ে কাজে যোগ দিলে জুলুর মনে একটাই চিন্তা হয় কি করে মেয়ে পটানো যায়, নতুন মেয়েটার নাম আকলিমা, কম কথা বলে নিচ মুখে কাজ করতেই থাকে, আগে নাকি মেশিন এ্যাম্ব্রয়ডারির কারখানায় সুতা কাটছে ছয় মাস। পোষায় না তাই ফিরোজা নিয়ে আসছে জুলুদের কারখানায়। কাজ শিখতেছে, জুলু খেয়াল করছে একবারের জন্যও চোখাচোখি হয়নি ওর… আর জুলুর জেদ ওখানেই… কি করে আকলিমাকে পটানো যায়, তারপর শুর- শুর করে বিছানায় চলে আসবে। এই ভেবে জুলু হকারের ডাক দেয়…. এই যে ভাই ও বোনেরা.. বলতেই সবাই হেসে ওঠে হো হো করতে করতে… জুলু ভাই চলবে…. জুলু যেন দর্শক সমর্থন পেয়ে একধাপ গলার খিরকি খুলে দিয়ে শুরু করলো ক্যানভাইস, এই যে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সকল রোগ মুক্তির নিরাময় কেন্দ্র আমাদের শান্তি সেবন চিকিৎসালয়, আমরা মাত্র একদিনেই বসি এইখানে, আগে আসলে আগে পাবেন, পিছে আসলে ফেরত যাবেন, আমাদের শান্তি সেবনের এমনিই গুণ… তেঁতুল গাছে ধরে বেগুন “এই যে ছোট ভাই .. একটু সরে দাঁড়ান, চাচা মিয়াকে সামনে আইতে দেন, আসেন চাচা… আপনের কি সমস্যা, সেটার সাথে প্রোডাক্ট মিলায়া লন, কাজের (নিশিচয়তা) একশ পারসেন্ট, কাজ না হলে টাকা ফেরত, আমরা কাজে বিশ্বাসী বাতে বিশ্বাসী না, জুলু চুপ থাকতেই এবার আকলিমা বলে উঠলো .. কি ব্যপার চুপ হয়ে গেলেন যে… শুরু করেন… জুলুর সমস্ত শরীরে একটা বিদ্যুতের ঝলকানি দিয়ে গেল কথা গুলো- শান্তি সেবন নিয়ে এসেছে সর্বপ্রকার বাত বেদনার এই ঔষধ তুলায় ভিজাইয়া বেদনা স্থানে দিবারাত্র ২/৩ বার লাগাইবেন। কাপড় গরম করিয়া সেক দিবেন, বাত বেদনায় নিয়মিত ১৫/১৬ দিন ব্যবহারে আরগ্য হয়। সর্দিকাশি মাথাধরা ও ফিটের রোগে এই ঔষধের ঘ্রাণ লইবেন। কাটা পোড়া বিছা-বোলতা ও শিংগি মাছের দংশনে এই ঔষধ তুলোর দ্বারা লাগাইবেন। কানপাকা, দন্তশূল ও দাঁতে পোকা, জিহবা ও মুখের ধারে পাঁচ ছয় ফোটা সরিষার তেলের সহিদ দুই ফোটা ঔষধ মিশ্রিত করিয়া দিবসে দুইবার লাগাইবেন। লক্ষ লক্ষ রোগীর রোগমুক্তির গ্যারান্টি লইয়া আপনাদের সামনে আমরা হাজির হই প্রত্যেক শনিবার। সকাল ১০ ঘটিকা হইতে বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত, যেকোন পরামর্শের জন্য চলে আসুন চলে আসুন।
সতর্কতা- সব সময় শিশি বন্ধ রাখিবেন।
সবাই একসাথে তালি দেয়াতে জুলু হকারের দুনিয়া থেকে বাস্তবে ফিরে এলো… তখনো আকলিমা অপলোক জুলুর দিকে তাকিয়ে আছে, কি যেন ভাবছে, জুলু মুচকি হেসে চোখ টিপ দিতেই আকলিমা চোখ সরিয়ে নিয়ে রঙের ট্রেতে ব্রাস দিয়ে রঙ লেপে দিতে লাগলো।
জুলু সব্বাইকে তাড়া দিয়ে বললো… আরে ঐ পিচ্চি তোরা জলদি হাত চালা সব ডাইস পানিতে ধুয়ে বাইরে শুকাইতে দে, পানি ঝরলে নিয়ে আস, না হলে কাপড়ে রঙ ভ্যাসরায় যাইবো গা, সাবধানে ছাপ মারো আকলিমা…. আমি গেলাম হুয়াইট পেষ্টের ড্রামডা আনতে। রঙ ও আনমু কিছু যা আছে তাতে মনে কয় না একশ গজে ছাপান যাইবো! ওই আকলিমা ছেমরি নতুন, রঙ বেশী দিতাছে, ধূরো! রঙ কম দাও বাকী যা থাকবো ঠোঁটে লাগাও চুম্মা দিতে মজাই লাগবো! আকলিমা কটমট করে বলে উঠলো জাউরা বেডা কুহানকার!
হঠাৎ মোবাইলে বেজে উঠলো মমতাজের গান… বন্ধু তুই লোকাল বাস… বন্ধু তুই লোকাল বাস, … রিং হতেই মনের মধ্যে কেমন যেন সুখ সুখ ভাব জাগে জুলুর, তাই তো দশটাকা দিয়ে সে এই গানটা রিং টোনে সেট করছে। আহ! শালার এই অসময়ে কে কল দিলো, কি করে রিসিভ করি বাল, শালার হাত ভর্তি ব্যাগ.. এরই মধ্যে রিং এর পর রিং.. আরে ও শালার মোবাইল একটু চুপ থাক খানকির পুত! ধরতাছি বাল! হাজার বিরক্তি নিয়ে ব্যাগ পায়ের বেড়ার ফাঁকে আটকে রেখে হ্যালো কে? ওপার থেকে ভাই আপনে কি জুলমত… হ আমিই জুলমত.. কি খবর? ভাই আমি আপনার বাসার মোড়ের দোকানদার, আপনার বড় ছেলে আইছে আপনের সাথে কথা কইতে। হ বাপ কি খবর তুমি স্কুল যাওনি বাপ জান? না আব্বা! আম্মুর শরীলডা ভালো নাই কাশি দিতে দিতে… কাপড়ে মুইতা ফালাইছে, হের পর কি বমি… চোখের বাত্তি মনে হয় অক্ষণে বাইর হইয়া আইবো, খালি কয় তর বাপরে খবর দে।

আচ্ছা রাখ আইতাছি বাবা, তুমি মার কাছে যাও, আমি কারখানায় মাল- সামান থুইয়াই আয়া পড়মুনে। অক্ষনে আইতাছি। আব্বা জলদি আসো। মা মনে হয় বাঁচবো না।

ফোন কাটতেই জুলু মেজাজ খারাপ করে গালি দেয় মমতাকে… শালী আমার জীবনডারে জ্বালায় খাইলো, শালীর বেডি শালী মরলেই আমি বাঁচি। এই শালীর আর দরকার নাই, খালি হাঁপায় কোন ক্ষেপ দিতেই পারি না, মেজাজটা তাতায়া থাকে, মর গা যাহ! তবুও জলদি পায়ে কারখানার মাল – সামান রেখে একটা রিক্সা নিয়ে সে দৌড় দেয় বাড়ির দিকে। পকেট হাতায় দেখে মাত্র একশ টাকা! ঘরে কৌটায় কিছু টাকা আছিলো কে জানে আছে কিনা, মমতা খরচ করে নাই তো! সাতদিন ধরে ছিটে ফোটাও ঘুমায় নাই মমতা কাশি আর কাশি শ্বাস কষ্ট ..শ্বাসের উপড় টান উঠলে পুরো শরীর দুলে উঠে। জুলু কয়েকদিন ধরে বারান্দায় ঘুমায়, মমতার কাশির শব্দে ঘরে ঘুমাবার জো আছে! যা গরম! বৃষ্টিও হচ্ছে না, সারাদিনের খাটুনির পর গা ঝিমিয়ে যায়। মমতা বলছিল কয়েকদিন ধরে.. বল্টুর আব্বা আমার লগে ঘুমাও। আমার কিছু ভালো লাগে না, রাইত হইলেই বুকের মধ্যে ধড় ফড় শুরু হয়। খুব অল্প বয়সে মমতার বিয়ে হয়, জুলু ঘরে ঢুকতেই দেখে মমতা খাট থেকে নিচে পড়ে গেছে, গোঙ্গাচ্ছে, নাকে একটা ভোটকা গন্ধ লাগে জুলুর… ইসসস রে কাপড়-চোপড় সব নাশ করছে শালী! কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিতেই টের পায় ঘামে জপজপে কপাল, একপলক জুলুর দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে শার্ট মুঠোয় চেপে ধরে… তারপর চিৎকার করে বলে আল্লাহ হু আকবর! আমারে মাফ করে দিও.. জুলু সরে বসতে গিয়ে টান খায় গলায়, শার্টের বোতাম খুলে যায়, জুলু চিৎকার করে এই মমতা মমতা ওঠ! আমি তোরে হাসপাতাল নিমু। মমতা বলে হাত ছাড়াতেই শক্তিহীন অসাড় হাত মাটিতে পড়ে যায়, চাকার মতো ঢালুর দিকে ছুটে যায় মমতার হাতের ভাঙ্গা চুড়ি! কোলের পোনা বাচ্চাটা কাপড়ের দোলনায় আঙুল চুষতেছে, আ আ শব্দ করে কি যেন বলছে… ঘরময় শান্ত… ঘরের চালে টিক টিক করতেই টিকটিকি বড় ছেলেটা বলে উঠলো আব্বা আম্মু মইরা গেছে। আব্বা আম্মু মইরা গেছে!

জোয়ান কালের কত বনহরিণীর পেছনে বন পথে ছুটছি কস্তুরি নিয়ে আসল বন হরিণ তো আমার ঘরেই আছিলো… আহা আমি বুঝি নাই, আমি চিনি নাই, পাশের রাস্তা দিয়ে দমকলের গাড়ি যাচ্ছে ঘন্টা বাজিয়ে। ঢং ঢং শব্দ করে। জুলুর বুকের মধ্যে হাঁস ফাঁস করে ওঠে। মনে হয় দমকলটি বুকের উপর এসে দাঁড়াবে। জুলু ছোট বাচ্চাটাকে বুকে জড়ায় ধরে জোরে, আজকের মতো অসহায় আর কোনদিন লাগেনি, মমতা মারা যাওয়ার পর চল্লিশদিন ধরে সে শুধু পাড়ার মোড়ে যায় আর আসে, ঘরের আলো নেভালেই কেমন যেন একটা ছায়া ভূতের মতো জানালায় বসে থাকে। ফিস ফিস করে আওয়াজ করে। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি, কারখানার কাজ কম, বৃষ্টির দিন খুব রিস্ক রঙের কাজের, রোদে না শুকাতে পারলে, ভোটকা গন্ধ বের হয়, আর রঙ ধুলে উঠে যাবার সম্ভাবনাই বেশী, মালিক ভালো হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে গেছে, কোন শর্ত ছাড়া, কচি কচি বাচ্চা রেখে বউটা অকালে মরলো, এই দয়ায়, ভালই করে গেলো মরতে মরতে মমতা, এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে জুলু। মেঝো পোলাডা খালি চুরুত চুরুত মুতের তলব, এই কি রে এতো মুত তোর কই থাকে শুনি, বার বার এই বর্ষা বাদলার দিন তরে বাহিরে নিতো কেডা শুনি, মেজোর হাত ধরে বাইরে বের হোতেই হু হু করে বাতাসের ধাক্কা খেলো.., গলির মুখে তখনো টিমটিম আলো রাস্তার অন্ধকার ঘন করে তুলছে, আশে পাশের বাড়িতে টিভি চলছে। বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই সিঁড়ি থেকে একটা ব্যাঙ লাফিয়ে নর্দমার পাশে ঘাসের উপর থ্যাবরে পড়ল। জৈষ্ঠের গরমে ব্যাঙ বেরিয়ে পড়ছে, নাকি আষাঢ় আসছে জুলু আজকাল কিছুই টের পায় না। শব্দ – বর্ণ – গন্ধ থেকে সে যেন অনেক দূরে বাস করছে। শরীর বেঁচে আছে, কিন্তু মন জানি কোথায় থেমে গেছে। কখনো কখনো জুলুর মনে হচ্ছে, যদি পৃথিবীর এমন কোন জায়গায় যাওয়া যেতো, যেখানে হাওয়া বাতাস খুঁটে তুললে আনন্দ উথলে উঠে। চাদর, বিছানা – বালিশ নারী শরীর তখন আর কিছুই আসে যায় না। সে ভাবতে ভাবতে গ্যাদা বাচ্চার কান্না শুনে ঘরে এলো ….ইসস বৃষ্টি হচ্ছে তবু যেন গরম যায় না, পোলাটা একদম ঘাইমা কাদা। ওই পাউডার আছেনি ঘরে? আগা দেখি… গ্যাদার গায়ে পাউডার লাগবো। ফলের রস চামুচ দিয়ে ফোটা ফোটা করে মুখে দিতেই ঠোঁটের কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো! ধূউত! এই কাম আমার দ্বারা হইবো না, চল্লিশ দিনেই তোগো অবস্থা কি অইছে দ্যাখ… ( হাড় – মাস ) এক কইরা ফালাইছি, না না তগো বাঁচাইতে হইবো। শালী খানকির খানকি, আমার জীবনের বারোটা বাজায় ছাড়লো মইরা!

বাইরে মেঘের গর্জন দফায় দফায় বৃষ্টি রাতভর। একটু চোখ লেগে আসতেই জুলু কল্পনার রাজ্যে খাবি খেতে লাগলো!
একটা চায়ের দোকানের খদ্দের জুলু একটা মেয়ে বানরুটি আর কলা এগিয়ে দেয়, জুলুর হাতে হাত লাগে, একটা বিদ্যুৎ চমক খেলে যায় দেহ মনে, মনে হয় এই স্পর্শটা জুলুর চেনা। দোকান মালিক খিস্তি করে; কি ভাই মনে ধরছে নাকি মাল ডা? লাগবো নাকি? জুলু হলো মেয়ে মাপা লোক, মালিক চায়ের কাপে কনডেন্স দুধ ঘুটতে ঘুটতে কাজলীর পাছার প্রশংসা করে, বুকের লাউয়ের কথা বলে, কাজলী একটু দূরে সরে যায়, জুলু বলে এই যে, আমার পানডা দাও দেহি, পান নিতেই এবার ইচ্ছে করেই চুনের বোটা কাজলীর আঙুলের ফাঁক থেকে নিতে হাতে টিপ মারে। কাজলী চুপ থাকে, কাজলী দূরে দোকানের কোনায় চিপায় দাঁড়ায়, মালিক তখনো কাজলীর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। কাজলীর সর্বাঙ্গের প্রশংসা শুনে জুলু নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, নিজের গায়ের পুরুষালী গন্ধ সে নিজেই পেতে শুরু করে।

মালিক জিজ্ঞেস করে জুলুকে, কি ভাই বিয়া করবানি? ভালা মাইয়া, শালী লাগে আমার! খুব গরীব, তবে খাবার না থাকলে কি হইবো গতর ভরা গোস্ত আছে। চলেন আপনারে আমাদের বাড়ি দ্যাখায় লই, যদি মনে কয় তো আইস্যা পরলেন! জুলু সটান ঘরে ঢুকে যায়, কাজলীর কাছে পানি খেতে চায়। কাজলীর বুকের সাইজের কথা জানতে চায়, আরে লজ্জা কি কইয়া ফালাও নয়ত হাত দিয়ে জাইনা লমু, আমি কিন্তু জাউড়ার জাউড়া। জুলু ঘরের খুঁটিতে হেলান দেয়া কাজলীর কাছে যায়, তার কাঁপা হাত নিয়ে বুকের উপরে রাখে, দুটো বল নিয়ে খেলতে থাকে। ঠোঁটে বুকে চুমু দেয় জাপটে ধরে, কাজলী এপাশ – ওপাশ করে, তবু আটকাতে পারে না জুলুর চুমু, আর দেহের খাঁজে ভাঁজে কামড়। ততক্ষনে জুলুর তালশ্বাস ঘন হয়ে উছলে মাটিতে পরে। হঠাৎ এতো ঠান্ডা লাগছে কেন, কোলের ছোট ছেলেটা হিসু করে ভাসিয়ে দিয়েছে! আহা জুলু ভাবে কোন স্বর্গে ছিল সে, এখন দেখে নরক… দেহ মনে এক অসম্ভব ক্লান্তি আসে। বাচ্চা তিনটার গায়ে কাঁথা টেনে দেয়, আর মমতার ফাঁকা জায়গাটা দেখে দীর্ঘ শ্বাস টানে।

চল্লিশ দিন আজ পার হলো মমতা চলে যাবার, কিন্তু এই চল্লিশ দিনে জীবনের অনেক কিছু বদলে গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে জুলু সারা বাড়িতে কাক আর বেড়াল তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, মমতা খুব সাদা মনের ছিল, জুলু মনে মনে বলছে বউটা সাদা আছিলো, আমি ওরে অবহেলা করছি, আদর করিনি, হয়ত মমতার আত্মা ঘুরে ফিরে আদর চাইতে আসে, মানুষ দেখে না কিন্তু শুনছি কাক পক্ষী, কুকুর বেড়াল নাকি দেখতে পায়! এই বাড়িওটা কবর স্থানের উপড়ে হুনছিলাম, কত স্বপ্ন দ্যাখতাম নিজের একটা বাড়ি হইবো, একটা চাওডা বারান্দা, সেখানে চড়–ই পাখির কিচকিচ শুনতে শুনতে বউয়ের বুকে হাত রেখে আরাম পোহাবো! এমন একটা স্বপ্ন পূরণ করতে দিন রাত এক করে বøক বাটিকের কারখানায় কাজ করছি, হ ক্লান্ত হইছি, মনে হইছে নারী সঙ্গ করি করছি, কত নারীরে যে নায়িকা বানাইছি। গাবতলীতে যাত্রা পালা দেখছি, আমার এই দেহটা পাইলে কত নারী যে খুশিতে ডগমগ হইছে, কত নারীরে দেখছি আমার বুকে ভেঙ্গে পড়তে, কত নারী ব্যথায় ফুলে গেছে, কত নারী আমার থকথকে তাল শ্বাসে মুখ রেখে একটু ধোঁয়া তুলে ফুঁশ! ফালি ফালি কইরা ফেলছি। জুলু দীর্ঘশ্বাস টানে। আহা দিন গুলো জুলুর! সে জানতো যৌনতা যৌবনের আগুন নেভানোর পানি, যৌনতার রেওয়াজ সে নিয়ম করেই করেছে। কঠোর চোখে বাংলা খেয়ে এসে বউটাকে আগাপাছ তলা পিটিয়ে হাত পা অবশ করে রাখে। মমতার ধারনা ছিল পা ফাঁক করে শুধু বছর বিয়ানি গাইয়ের মতো চার- পাঁচখান পোলা মাইয়া জন্মদিলেই ক্ষত বিক্ষত মাংস থেকে বংশ বৃদ্ধি। তার বিশ্বাস ছিলো ওখান থেকেই প্রেম মহব্বত আসবে। মমতা জুলুর সংসারে এসে ভয়ংকর অভাব দেখেছে। কষ্টে মুখে ফেনা উঠলেও টু শব্দটি করে নাই। তখন জুলু কাঁচা পোয়াতির গন্ধ নাকে নিয়ে কত মর্জিনার ঘামার্ত গায়ে সাঁতার কাটছে অবলীলায়। কত নারীর নিম্নদেশে নেমে গিয়ে, বিলি করেছে তাস, পকেটের তলা উল্টে দিয়ে এসেছে শেষ কড়িটাও। সে ছিল অন্ধকারে কালোজাম আর কিসমিসের নেশায় মত্ত। এদিকে মমতা রক্ত শূন্যতায় শুধু মৃত্যুর জন্য একটু একটু করে এগিয়ে গেছে। হঠাৎ জুলু চিৎকার করে কাঁদে মমতা তুই কই গেলি, আমি তো আর পারি না, এগুলারে কই থুইয়া যাই, চাকরী নাই, পোলাপাইনের মুখে কি দেই! আমার সব শেষ হয়ে গেল! হঠাৎ পেছনে একটা নরম হাতের স্পর্শে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আকলিমা, কারখানায় অনেকদিন যাওয়া হয় না, লাজুক মেয়েটা একা বাড়িতে ক্যামনে আইলো সাত – পাঁচ ভাবতেই আকলিমা বল্লো চলেন উডেন গোসলে যান, রান্না ঘরডা কোনদিকে কন দেহি,

ছোটডাকে বুকে নিয়ে আকলিমা গান ধরে। জুলু এক পা দু পা করে সামনে আসে। আকলিমা তুমি কি বুইঝা করতাছো এই গুলান? হ বলেই আকলিমা বলে, যান মৌলভী ডাকেন!

জোনাক বাড়ির আঙ্গিনায় কুপি বাতি জ্বলে উঠলো… রাতে আলো নিভতেই টের পেলো আকলিমা শক্ত একটা হাত ওকে আঁকড়ে ধরে… চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে… ঝটকা টানে আকলিমা জুলুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে যাও আগে সুরা পড়ে আসো… জুলু বাধ্য ছেলের মতো বল্লো আমি সঙ্গমের সুরা জানি না…। আকলিমা বল্লো আমি বলছি আমার সাথে বলো! জুলু আকলিমার সাথে বলে গেল এবার আকলিমা জুলুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, জুলুর দেহভার নিতে চেষ্টা করতে করতে আকলিমা চিৎকার করে উঠলো… বল্টুর বাবা আস্তে। জুলু এবার এলোপাতারি চুমু দিতে লাগলো আর পাগলের মতো বলতে লাগলো আমার মমতা, মমতা, তোমারে আমি খুব আদর করমু আর যাইতে দিমু না কোথাও… দুজনের অনন্দঅশ্রু ঘাম লালায় মিশে যেতে লাগলো। জুলু পাগলের মতো বলতে লাগলো মমতা আমার লক্ষ্মী বউটা! এবার আকলিমা বল্লো জুলু আমিই তোমার মমতা। জানালা থেকে ভূতের মতো ছায়াটা সরে অনেক দূরে মিলিয়ে যেতে যেতে.. জুলুকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো … জুলুর বুকে তখন আকলিমা ওম নিচ্ছে!