পিরােজপুরের স্বরূপকাঠির গােডাউনে শীতের কম্বল, গরিবের চাল খাচ্ছে পােকা-ইঁদুর
পিরােজপুরের স্বরূপকাঠির বলদিয়া ইউনিয়নে ত্রাণের শীতের কম্বল আজও বিতরণ করা হয়নি। দুই বছর ধরে পরিষদের গোডাউনে পড়ে থাকা ভিজিডি, ভিজিএফের চাল খাচ্ছে ইঁদুর আর পােকায়। অকার্যকরভাবে পড়ে রয়েছে জাইকা প্রকল্প থেকে দেয়া মিনি অ্যাম্বুলেন্স। ইউনিয়নের আট সদস্যের (মেম্বার) করা অভিযােগের পরিপ্রেক্ষিত ওই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে পরিষদের আদালত নামের কক্ষ ও গোডাউনে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
শুধু তা-ই নয়, রমজানে ঈদের জন্য বরাদ্দ করা টাকা ঈদের পর বিতরণ করা হয়েছে। দায় এড়াতে এই গরমে কম্বল বিতরণের চেষ্টা করতেও দেখা যায়। তবে সাংবাদিকদের উপস্থিতির কারণে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
ওই ইউনিয়নের সদস্য আমিনুল ইসলাম, বাবুল মিয়া, আব্দুর রহিম, জাহারুল ইসলাম, শুকলাল ঢালী, ফারুখ হােসেন, মাে. আলাউদ্দিন ও মাে. সােহেল পিরােজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযােগে উল্লেখ করেন, ১নং বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাে. শাহীন আহমেদ একজন সন্ত্রাসী, রাষ্ট্র ও সরকারবিরােধী লােক। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পেট্রলবােমাসহ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সেই ঘটনায় তাকে ১ নম্বর আসামি করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করা হয়। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হয়।
‘চেয়ারম্যান শাহীন আহম্মেদ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কম্বল ও চাল বিতরণ না করে গােডাউনে ফেলে রেখেছেন। বিতরণ কাজে সদস্যদের দেয়া তালিকার কােনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ইচ্ছামাফিক সব ধরনের সরকারি সাহায্য তার নিজস্ব লােক দিয়ে বিতরণ করেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জিআর প্রকল্পের ৪০০ কেজি চাল গােডাউন থেকে তােলা হয়নি আজও। জেলেদের চাল আড়াই মাস পরে বণ্টন করা হয়েছে।’
ইউপি সদস্যরা অভিযােগে আরও উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান এলাকায়ই থাকেন না। তার অনুপস্থিতির কারণে জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। উপজেলা পরিষদের রেজুলেশন দেখলে দেখা যাবে তিনি কতটি সভায় উপস্থিত হয়েছেন। তিনি সদস্যদের সঙ্গে আলােচনা না করেই সব সিদ্ধান্ত একাই নেন।
কয়েকজন মেম্বার জানান, চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। এ খবর পেয়ে তালিকা ছাড়াই কম্বল বিতরণের জন্য ইউপি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
ইউপি সচিব চাঁদ নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবেই কাজ করতে হয়। তিনি (চেয়ারম্যান) বেশিরভাগ সময় এলাকায় থাকেন না। সদস্যদের সঙ্গে সময়ের অভাবে কম্বল ও চাল বিতরণ করা হয়নি।’
ইউপি সচিব আরও জানান, চার মাস আগে উপজেলা পরিষদ থেকে ৮০ পিস কম্বল দেয়া হয়েছে। কিন্তু কম্বল বিতরণে চেয়ারম্যানের নির্দেশ না পাওয়ায় এতদিন বিতরণ করা হয়নি। এখন চেয়ারম্যান এলাকার জেলেদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মোবাইল ফোনে কথা হয় ইউপি চেয়ারম্যান মাে. শাহীন আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কম্বলগুলো তালিকা করে বিতরণের জন্য আমি বলেছি। তবে বিতরণ করার পরে অনেকে চাল নিতে আসে না। সে চালগুলা রয়ে গেছে।’
চালগুলো ইঁদুর আর পােকার খাদ্যে পরিণত হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে যান চেয়ারম্যান শাহীন আহম্মেদ। তিনি জানান, জিআর প্রকল্পের চাল সমন্বয়হীনতার অভাবে উত্তােলন করা হয়নি।
গরিব মানুষের চাল বিতরণের অভিযােগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বলদিয়ায় আমিসহ সকলেই গরিব।’
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস কুমার দাস বলেন, ‘ত্রাণের মালামাল তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ করতে হবে। তা না করে থাকলে খােঁজ নিয়ে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাে. মােশারফ হােসেন বলেন, টাকা বিতরণের বিষয়ে ওই ইউনিয়নে কালক্ষেপণ করায় অনেক কাহিনি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কঠাের নির্দেশে বিতরণে বাধ্য হয়েছেন। অনিয়ম পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন