পুরো পৃথিবী শেখ হাসিনার অপরাধ দেখছে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারের জননী (শেখ হাসিনা) অনেক উন্নয়নের গল্প বানিয়েছিলেন। এ উন্নয়নের গল্পের আড়ালে চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পুরো পৃথিবী ঘুম থেকে উঠে তার অপরাধ দেখছে। খুন, ব্যাংক ডাকাতি এবং অর্থ পাচারের মতো বড় অপরাধে তার সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসছে। আশা করছি, আইন প্রক্রিয়া মেনে দ্রুতই তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনে যা হচ্ছে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষি শুরু হয়েছে। এছাড়াও সরকার গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করছে না বলে জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে এ চেষ্টা চলছে। জোরেশোরে চলছে আইনগত প্রক্রিয়া। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপার। আমরা বারবার বলছি- শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। আশা করব, ওনাকে দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে। তিনি বিচারের সম্মুখীন হবেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার অপরাধগুলো কতটা ভয়াবহ ছিল। পুরো পৃথিবী ঘুম থেকে উঠে এখন দেখছে তার কী কী অপরাধ ছিল। তিনি জানান, গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। আইনবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে হাজারো মানুষকে। জুলাই বিপ্লবে মারা গেছেন দেড় হাজার ছাত্র-জনতা।
জুলাইয়ে আরাফাত নামে গুলিবিদ্ধ ৬ বছর বয়সি মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যুকে স্মরণ করে শফিকুল আলম বলেন, একটি শিশুকে পুলিশ গুলি করেছে, কতটা ভয়াবহ। রোববার তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার শাসনামলে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর পরের হত্যাকাণ্ড। বিএনপি বারবার বলছে তাদের ৫০ থেকে ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ মামলা ছিল মিথ্যা। ৫০ লাখ মামলা যাদের নামে হয়েছে, তাদের পরিবার অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, সরকার তার দুর্নীতির বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে। তিনি কী পরিমাণ চুরি করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়। শেখ হাসিনা কীভাবে চোরতন্ত্র জারি করেছিল, এর একটি চিত্র শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে দেখা গেছে। ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিবছর পাচার হয়েছে এবং ব্যাংকগুলো থেকে কীভাবে টাকা লুট হয়েছে, তা সবার জানা। প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, তার পিওন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সেই পিওনের ব্যাংক তহবিলে ৬২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকজনের আন্দোলনের বিষয়টি আমরা সিরিয়াসলি দেখছি। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন ও কেবিনেট সচিব দেখভাল করছেন। আমরা নিবিড়ভাবে জিনিসগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা কোনো সরকারি চাকরিজীবীকে বঞ্চিত করতে চাই না। সবার প্রতি সুবিচার করতে চাই। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের বিষয়গুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে সবাইকে জানানো হচ্ছে। ফলে অনেকে এটা নিয়ে কথা বলছেন। এর মানে এ নয় যে এটা নিয়ে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আমি মানতে চাচ্ছি না। গত চার মাসে আমাদের প্রশাসন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্থিতিশীল হয়ে গেছে। ফলে আমি মনে করি, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে, এর সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। বিশেষ করে মামলার যেসব পরিসংখ্যান ছাপা হচ্ছে, এর অধিকাংশই জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হওয়া হত্যাকাণ্ডের মামলা। এ ব্যাপারে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে একটি টেলিভিশনে কয়েকজনকে চাকরিচ্যুতির এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, সরকার কাউকে চাকরিচ্যুত করতে বলেনি। বেসরকারি কেউ করলে এর দায় সরকার নেবে না। অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। প্রেস সেক্রেটারি আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সরকার একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিতে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের বিকল্প বড় বাজার তৈরি হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানি উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপকেন্দ্রিক। তাই বিকল্প বাজার হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়াও চীনের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ৭৬৪ জন সরকারি চাকরিজীবীকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বেতনভাতা খাতে সরকারের ব্যয় হবে ৪২ কোটি টাকা এবং অবসরভাতা বাবদ ১৩ কোটি টাকা।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল সম্প্রতি ভারত সম্পর্কে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। পরবর্তী সময়ে সেটি মুছে দিয়েছেন। এ নিয়ে ভারত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী। জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, মাহফুজ আলমের মন্তব্য তার ব্যক্তিগত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন