পুলিশের সাথে প্রবাসীর স্ত্রী’র পরকীয়া; মেয়েকে হত্যার চেষ্টা
শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার সাবেক এসআই ফিরোজের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত একই এলাকার ইতালী প্রবাসী সুমন কাজীর স্ত্রী রুমা আক্তার রুমি। তাদের রোমাঞ্চকর এ পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় রুমার ঘরে ফিরোজের রেখে যাওয়া পুলিশের হ্যান্ডকাপ হাতে-পায়ে পড়িয়ে নিজের মেয়ে ঐশিকে (১৩) নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করে রুমা। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। ঐশি নড়িয়া বিহারী লাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী।
মায়ের এ অপকর্মের কথা বাবাকে ফোন করে জানানোর কথা বলায় মা (রুমার) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নড়িয়া থানায় মায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে ঐশি। মেয়ের দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে নড়িয়া থানা পুলিশ গ্রেফতারও করেছে মা রুমাকে।
ঐশী, নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রুমা তার মেয়ে ঐশি ও ছেলে রাহাত (৮) কে নিয়ে পৌরসভার বৈশাখী পাড়ার জুয়েল ছৈয়ালের বাড়ীতে ভাড়া থাকতো। স্ত্রী ও সন্তদানদের ভাড়া বাসায় রেখে সুমন কাজী ৭-৮ বছর ধরে ইতালিতে রয়েছেন। কিন্তু স্বামীর প্রবাসে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্তানদের অগোচরে ২০১১ সাল থেকে নড়িয়া থানার সাবেক এস আই ফিরোজের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রুমা। এ সম্পর্কের জের ধরে তাদের মাঝে আর্থিক লেনদেনের সম্পর্কও গড়ে উঠে বলে জানান এলাকাবাসী ও মেয়ে ঐশি।
তারা আরো অভিযোগ করেন, ফিরোজের সাথে ছাড়াও রুমার আরো অনেক ছেলে সাথে সম্পর্ক ছিল, ছিল অবাধ মেলামেশা। আর এ সব কিছুরই প্রতিবাদ কিংবা মা’কে এগুলো করতে না করলেই ঐশির উপর চলতো অমানবিক নির্যাতন। এসআই ফিরোজের সাথের সম্পর্কটি তার বাবাকে জানিয়ে দেয়ার কথা বললে রুমা ঐশির পায়ে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে নির্যাতন করে এবং বটি দিয়ে হাতের কনুইয়ে কোপ দেয়। এতে গুরুতর আহত ঐশির হাতে ১১ টি সেলাই দেয়া হয়। এমন নির্যাতন সব সময়ই চলতো বলে জানায় ঐশি। তার সাথে সাথে ছেলে রাহাতকে মারধরসহ বিভিন্ন ধরণের শারিরিক নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো রুমা।
ঐশি জানায়, এর আগে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকাকালিন সময়ে একই কারণে তাকে (ঐশি) চটা গড়ম করে পায়ে ছেকা দেয় তার মা (রুমা)।
এদিকে, ঐশিকে গত মঙ্গলবার হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলেও নির্যাতনের বিষয়টি গোপন রাখা হয়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐশি পালিয়ে নড়িয়া থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে তার উপর চলা অমানুষিক নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে মা (রুমা’র) বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুমা পূনরায় মেয়েটির পায়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এসময় স্থানীয়দের দেয়া খবরে থানা পুলিশ এসে রুমাকে আটক করে নড়িয়া থানায় নিয়ে যায়।
এরপর নড়িয়া থানা পুলিশ রুমার বাসা-বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে ফিরোজের রেখে যাওয়া (পুলিশের এক জোড়া হ্যান্ডকাপ) উদ্ধার করে।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত রুমাকে ৩ দিনের রিমান্ড চেয়ে শরীয়তপুর কোর্টে প্রেরণ করে পুলিশ।
ঐশী জানায়, গত মঙ্গলবার মা (রুমা) কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল এবং তার সাথে ফোনের মধ্যে ঝগড়াও হয়। ফোন রেখে আমাকে ও আমার ছোট ভাই রাহাত (৮) কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ পায়ে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়া বলে ‘যে তুই যদি এই ঘটনা কাউকে জানাস, তাহলে তোকে জানে মেরে ফেলবো’। আমার পা থেকে হ্যান্ড কাপ খুলে দিতে বললে এবং এই ঘটনা আব্বু কে জানাইতে চাইলে আমার উপর ক্ষীপ্ত হইয়া বটি দিয়া বাম হাতে কোপ মারিলে আমার বাম হাতের কনুইর উপরের অংশে কোপ লাগে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আমাকে বাসায় এনে আটকে রাখে।
পরের দিন আমি হাতের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে বলছি যে আব্বু কে জানিয়ে দিব। এর পর ছোট ভাই রাহাতকে মেরে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে গেলে আশে-পাশের লোকজন এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। এর আগেও আমরা যখন ঢাকা থাকতাম তখন চটা গরম করে আমার পায়ে ছেকা দিয়ে পুড়ে দেয়। এজন্য মাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।
পুলিশের হাত কড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ঐশী বলে, এটা দারোগা ফিরোজ আঙ্কেলের। সে যখন আমাদের বাসায় আসতো, তখন রেখে গিয়েছিল। নড়িয়া থানার সাবেক এস আই ফিরোজ মোবাইল ফোনে বলেন, আমি তাদের পাশের বাসায় থাকতাম। তার সাথে আমার কোন সর্ম্পক ছিল না।
হ্যান্ডকাপের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ঐ বাসায় এসআই পারভেজ ভাড়া থাকতেন। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্যই কেউ অপপ্রচার করছে।
বর্তমানে তিনি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় কর্মরত রয়েছেন বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
নড়িয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া জানান, প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও রুমার বাসা থেকে এক জোড়া হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করা হয়েছে। তাই ঐশির অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ঐশির অভিযোগটি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নড়িয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
তবে নড়িয়া থানার সাবেক এসআই ফিরোজের সাথে রুমার পরকিয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান।
তাহলে রুমা তার মেয়ে ঐশিকে কেন নির্যাতন করতো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঐশির অভিযোগের ভিত্তিতে জানান, তার মা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলতো। আর এটাতে ঐশি বাধা দিতো এবং তার বাবাকে জানিয়ে দিবে বলায় তাকে ও তার ছোট ভাইকে নির্যাতন করতো রুমা। তিনি আরো জানান, রুমাকে আদালতে প্রেরণ করে তিন দিনের রিমাণ্ডে আবেদন করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন