পোপ কেন মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেন

রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মনে করেন, মিয়ানমার সফরের সময় তিনি ‘কৌশলগত’ কারণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে গেলেও দেশটির সামরিক বাহিনী ও সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ বার্তাই দিতে পেরেছেন।

তবে বাংলাদেশ সফরের সময় পোপ যখন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের দুর্দশার বর্ণনা শোনেন, তখন তিনি কেঁদেছেন বলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করে নিজের বাসগৃহে যাওয়ার পথে পোপ ফ্রান্সিস বিমানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।

হামলা-হত্যা-নির্যাতনের শিকার জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে সারা বিশ্বে সমালোচনার মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর তিন দিনের সফরে মিয়ানমার পৌঁছেছেন ক্যাথলিক চার্চপ্রধান।

এই সফরে পোপ যেন ‘রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা’র খাতিরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করেন, সে জন্য তাঁকে আগে থেকেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দেশটির খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষ থেকে। সেই পরামর্শ মেনেই তিনি মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। খ্রিস্টানরাও মিয়ানমারে সংখ্যালঘু। যদিও এর বিরোধিতা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, যারা এরই মধ্যে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত এই দেশহীন জনগোষ্ঠীকে’ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘রোহিঙ্গা’ বলেই অভিহিত করে আসছে। এর আগে পোপও ‘রোহিঙ্গা ভাইবোন’ শব্দটি ব্যবহার করে তাদের প্রতি সহমর্মিতার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

মিয়ানমার সফর শেষে ২ ডিসেম্বর পোপ ঢাকায় আসেন। এখানে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

বিমানে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার সময় পোপ ইঙ্গিত দেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, বার্তা দেওয়াটাই মূল কাজ।

‘আমি জানি, যদি আমি সরকারি ভাষ্যে এই শব্দটি ব্যবহার করতাম তাহলে তাঁরা হয়তো আমাদের মুখের উপরই আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু আমি প্রকাশ্যে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি, তাদের অধিকারের কথা বলেছি, বলেছি কেই তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না’, যোগ করেন পোপ।

ক্যাথলিক চার্চপ্রধান আরো জানান, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং সেখানে সত্যের সঙ্গে কোনো আপস করা হয়নি।

পোপ এমন একটি সময়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে করলেন, যার কিছু আগেই দেশ দুটির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই চুক্তিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে গত বছরের অক্টোবর থেকে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরুর কথা বলা হলেও তা কবে নাগাদ শেষ হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক তথ্যমতে, গত ২৫ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাঁরা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানে এরই মধ্যে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।