প্রসব করানোর সময় নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন!
প্রসব করানোর সময় পেটে মাথা রেখেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন দুই নার্স ও এক আয়া। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে।
পরে তা ডাস্টবিনে লুকানোর চেষ্টাকালে রোগীর স্বজনদের নজরে আসে। এতে প্রসূতির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে পেটে সন্তানের মাথার অংশ রেখে তড়িঘড়ি করে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশন করে রবিবার ওই প্রসূতির পেট থেকে সন্তানের মাথার অংশ বের করে আনেন। তার অবস্থা বর্তমানে আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন পরিবারের স্বজনরা।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক ও ডা. ডা. নীলা পারভীন কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির। এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।
জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের রিকশাচালক সেলিম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য শনিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে্ক্সে মেডিক্যাল অফিসার ডা. নীলা পারভীনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফাতেমার স্বামী সেলিম মিয়া ও স্বজনরা জানান, প্রসব বেদনা থাকলেও কোন চিকিৎসক না থাকায় সন্তান প্রসবের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের নার্স আছিয়া ও ঝর্না রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য বাইরের দোকান থেকে ওষুধপত্র ক্রয় করান। পরবর্তীতে প্রসব বেদনায় ওই প্রসূতি হাসপাতালে কাতরালেও সময়মত ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার কোনো ব্যবস্থা নেননি।
একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নার্স আছিয়া, ঝর্না ও আয়া জেসমিন মিলে ফাতেমার গর্ভের সন্তানের পা এবং হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে হাত-পাসহ অর্ধেকাংশ ছিঁড়ে প্রসুতির পেট থেকে বেরিয়ে আসে এবং মাথা ছিঁড়ে পেটে থেকে যায়।
এ অবস্থায় প্রসূতির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে গভীর রাতে প্রসূতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রবিবার ওই হাসপাতালে অপারেশন করে প্রসূতির পেটে থাকা সন্তানের মাথাসহ অর্ধেকাংশ বের করে আনা হয়। বর্তমানে ওই প্রসূতি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
ওই প্রসূতির স্বামী সেলিম জানান, আমি রিকশা চালাই, কার কাছে বিচার চাইব, অভিযোগ কেমনে করবো, কোথায় যাবো?
তিনি জানান, ডা. নীলা সরকারি ডাক্তার, তিনি দেবিদ্বারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করেন, কিন্তু কাংখিত টাকা দিতে পারবো না, এ আশংকায় আমাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডা. নীলার কথা মতো আমি সরকারি হাসপাতালে যাই, কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তিনি একবারও আমার স্ত্রীর খবর নেননি। ডাক্তার ও নার্সের অবহেলায় আমার স্ত্রী আজ মরতে বসেছে, আমি তাদের বিচার চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির জানান, দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক ও ডা. নীলা পারভীনকে না জানিয়ে রাতে নার্স আছিয়া, ঝর্না ও আয়া জেসমিন মিলে সন্তান ডেলিভারির চেষ্টা করেন। এসময় সন্তানের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে মাথার অংশ পেটে রেখেই প্রসূতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার তদন্তের জন্য দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তামান্না সোলেমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য সচিব একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মনজুর রহমান ও সদস্য মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমার কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে আমি মর্মাহত হয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন