প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্ট পড়ে আছে, মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

নানা কারণে পাসপোর্ট করে মানুষ। আর পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তির অভিযোগও কম নয়। কিন্তু সম্প্রতি অন্যরকম এক সমস্যায় পড়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। তা হলো কয়েক লাখ পাসপোর্ট তৈরি হলেও সেগুলো নেওয়ার মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব পাসপোর্টের মালিক আসলে কে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে প্রায় আড়াই লাখের মতো পাসপোর্ট পড়ে আছে, যেগুলোর মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ পাসপোর্ট করার সময় যেসব নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগই ভুয়া। বিশেষ করে একই নাম ও ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। সব জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাঈদ দাবি করেন, তিনি তার অফিসে নোটিশ দেওয়ার পর অনেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। এখনও কিছু রয়েছে। তবে তিনি নোটিশ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

অবিলিকৃত পাসপোর্টের অধিকাংশ মালিকের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরে ভুল থাকায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে ফোন নম্বর দিলেও সেগুলোর অধিকাংশ বন্ধ। কিছু নম্বর খোলা পাওয়া গেলেও কেউ ফোন রিসিভ করছে না। আবার কোনো নম্বরের শেষের ও প্রথম ডিজিট ভুল। এ কারণে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না এসব পাসপোর্টের মালিকের পরিচয়।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অর্থ) উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত সচেতন করতে আমরা নোটিশ করেছি।

পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন স্বীকার করেছেন, দালালদের কারণেই বেশিরভাগ পাসপোর্ট তৈরির পর আসল ব্যক্তিরা হাতে পান না। বেশিরভাগ সময় দালালরা চাহিদা মতো পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে আর সেই পাসপোর্ট নেন না।

দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে সারাদেশের পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। শত শত দালালকে তারা গ্রেফতার করে এবং সাজাও দিয়েছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাজাভোগের পর দালালরা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু করেন সেই দালালি ব্যবসা। তাদের পাল্লায় পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। কোনোভাবেই দালালদের রোধ করা যাচ্ছে না।

যদিও চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবু সাঈদ দাবি করেছেন, তার কার্যালয়ের ভেতরে কোনো দালাল ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকি আশপাশেও কোনো দালাল নেই।

পাসপোর্ট অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, অবিলিকৃত পাসপোর্টের অধিকাংশ মালিকের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরে ভুল থাকায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে ফোন নম্বর দিলেও সেগুলোর অধিকাংশ বন্ধ। কিছু নম্বর খোলা পাওয়া গেলেও কেউ ফোন রিসিভ করছে না। আবার কোনো নম্বরের শেষের ও প্রথম ডিজিট ভুল। এ কারণে কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না এসব পাসপোর্টের মালিকের পরিচয়।

কয়েকটি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এসব পাসপোর্টের বেশিরভাগ করা হয়েছে দালালদের মাধ্যমে। ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে তারা এই সমস্যা মোকাবিলায় ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করা পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অফিসে নোটিশ পাঠানোর পাশাপাশি বন্ধ থাকা মোবাইল নম্বরগুলোর মালিকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।