ফরহাদ মজহারের খুলনায় ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও প্রকাশ
ফরহাদ মজহারকে কথিত অপহরণের দিন তার খুলনায় অবস্থানের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। এই ফুটেজ ব্যবহার করে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভি একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এসব ফুটেজ তারা পরীক্ষা করে দেখছে। পাশাপাশি স্ত্রী ছাড়াও এক নারীর সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ আশা করছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও কল লিস্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই এই কথিত অপহরণ রহস্যের উন্মোচন করা যাবে।
গত ৩ জুলাই ভোরে এক জনের ফোন পেয়ে ফরহাদ মজহার রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বের হন বলে সেদিন তার ঘনিষ্ঠরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। পরে তিনি তার সঙ্গীনি ফরিদা আক্তারকে কল করে অপহরণের কথা জানান। ১৯ ঘণ্টা পর খুলনা থেকে একটি বাসে করে ঢাকায় ফেরার পথে যশোরের অভয়নগর থেকে ফরহাদকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরদিন ফরহাদ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং আদালতকে জানান, তিনি ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর খুলনায় সন্ধ্যা সাতটায় হাতে একটি বাসের টিকিট ধরিয়ে দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তিনি ওই বাসেই ঢাকায় ফিরছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত হয়ে পড়ায় স্ত্রী আ অব্য কাউকে ফোন করতে পারেননি।
কথিত অপহরণ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে খুলনায় বিকাল বেলায় ফরহাদ মজহারের একা হেঁটে বেড়ানোর সিসি ক্যামেরার ছবি প্রচার করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩ জুলাই বিকেল চারটা ৪১ মিনিটে ফরহাদ মজহার খুলনা নিউ মার্কেটে প্রবেশ করেন। তার পরনে ছিল চেক লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবী এবং মাথায় পাগড়ী।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফরহাদ মজহার নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারের প্রবেশ মুখ দিয়ে প্রবেশ করেন। বিকেল পাঁচটা ১৭ মিনিটে তাকে একই জায়গায় পায়চারী করতে দেখা যায়। এসময় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টাও করেন তিনি। এসময় তার কাঁধে ঝোলানো ছিল সাদা রঙের ব্যাগ।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ৬টা ২৩ মিনিটে অন্য একটি ক্যামেরায় তাকে দেখা যায় অনেকটা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে ফরহাদ মজহার নিউ মার্কেটের দোতলায় ওঠে যাচ্ছেন। সব শেষ ৬টা ৪৪ মিনিটে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে মার্কেট এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে ৪ জুলাই আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সন্ধ্যা সাতটার পর অপহরণকারীরা তার চোখ খুলে ছেড়ে দেওয়া হয় খুলনায়। এর আগে ফরহাদ মজহারের স্ত্রীকে বলেছিলেন, অপহরণকারীরা তাকে নির্যাতন করেছে।
গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্যে নিউ মার্কেট এলাকায় যাওয়ার আগে শিববাড়ীর মোড়ে হানিফ কাউন্টার থেকে ৩টা ৪১ মিনিটে ফরহাদ মজহার নিজেই টিকিট কেনেন। টিকিটে ফরহাদ মজহার তার নাম গোপন করে গফুর নামে টিকিট কেনেন।
ওই প্রতিবেদনে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাদিক বলেন, ‘আমি ওনাকে চিনতামও না, সাধারণ যাত্রী যেভাবে বলে আমাকে একটি টিকিট দেন, আমি তাকে টিকিট দিয়েছি। আমি ওনাকে বললাম কী নাম হবে স্যার, ওনি বললেন গফুর। মোবাইল নম্বর চাইলে ওনার নিজের মোবাইল নম্বরটাই ওনি দিয়েছে। ওনার সঙ্গে কেউ ছিল না, ওনি একাই এসে টিকিট নিয়েছেন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে বাসে ওঠেন তিনি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং শুরু খুলনায় তার অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে নগরীর এপ্রোচ রোড এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। এরপর খুলনার নিউমার্কেট সংলগ্ন একটি গ্রিল হাউজে ফরহাদ মজহার অবস্থান করছেন বলে জানতে পারে র্যাব। গ্রিল হাউজ হোটেলের মালিক, ক্যাশিয়ার ও খাবার সরবরাহকারী তিন ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ তথ্য জানান।
এই খবরে রাত ১০টায় সেখানে যায় র্যাব, কিন্তু ততক্ষণে তিনি সে স্থান ত্যাগ করেন। গ্রিল হাউজের মালিক আব্দুল মান্নান যমুনা টেলিভিশনকে জানান, রাত আটটা ৩৫ মিনিটে ফরহাদ মজহার তার হোটেলে আসেন। ভাত, ডাল ও সবজি দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন। তারপর রাত নয়টার দিকে তিনি বের হয়ে যান। তিনি একা ছিলেন। তার পরনে সাদা লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি এবং মাথায় সাদা কাপড় ছিল।
ফরহাদ মজহারকে খাবার সরবরাহকারী হোটেল স্টাফ রেজাউল করিম বলেন, ‘তাকে (ফরহাদ মজহার) শারীরিকভাবে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তার চোখে ঘুম ঘুম ভাব ছিল। ভাত খেয়ে তিনি বের হয়ে যান।’ হোটেলের ক্যাশিয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, ‘তার (ফরহাদ মজহার) ১৭০ টাকা বিল হয়েছিল। তিনি নিজে বিল পরিশোধ করে হোটেল থেকে বের হয়ে যান।’
ফরহাদ মজহার ঢাকায় ফেরার পরদিন এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগকে। গত ৮ জুলাই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রমাণ আছে, তাতে ফরহাদ মজহার সাহেব অপহরণ হয়েছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ফরহাদ মজহার তার ‘অপহরণ’ নিয়ে পুলিশ ও আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে অমিল রয়েছে।
https://youtu.be/6sFP-MZZ35M
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন