ফুটবলে এটাই তো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ!

ফুটবলে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কোনটি? উত্তরে ভিন্নতা থাকবে। অনেকেই বলবেন ২০০৩ সালে ঘরের মাটিতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়। কেউ কেউ বলবেন ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে জুয়েল রানার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো সাফ গেমস ফুটবলে সোনা জয়। ১৯৯৫ সালে মোনেম মুন্নার দলের মিয়ানমার থেকে চার জাতি ফুটবলের শিরোপা জিতে আসার কথাও আসবে বহু ফুটবলপ্রেমীর মুখে। একটু পুরোনো প্রজন্ম ১৯৮০ সালে কুয়েতে এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্তপর্বে খেলার কথাও সেরা-সাফল্যের তালিকায় নিয়ে আসতে পারেন। হাজার হোক এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলাটা কিন্তু বড় সাফল্য। সেবারই প্রথম ও এখনো পর্যন্ত শেষবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। মাঠে নেমেছিল এশিয়ান ফুটবলের সেরা দলগুলোর একটি হয়ে।

জাতীয় দলের সাফল্য বলতে এ কটিই। সে তুলনায় বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাতে অনেকবারই চূড়ান্তপর্বে খেলার গৌরব আছে বাংলাদেশের। অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বাছাইপর্ব অতিক্রম করে চূড়ান্তপর্বে সাফল্যও আছে। কিন্তু মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্তপর্বে খেলার মাহাত্ম্যটাই অন্য রকম। নারী ফুটবল-চর্চার বয়স যে দেশে দুই দশকও অতিক্রম করেনি, সে দেশের মেয়েদের একটি বয়সভিত্তিক দলের এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়াটাকে দেশের ফুটবলে অনেক বড় সাফল্যই।

১০ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে বাংলাদেশের মেয়েরা দেশ আজ দেশ ছেড়েছে। এই প্রতিযোগিতা থেকে তিনটি দল সরাসরি আগামী বছর উরুগুয়েতে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপে খেলবে। তার মানে এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের জন্য ফুটবলের যেকোনো পর্যায়েরই একটি বিশ্বকাপে পা রাখার সুযোগও।

বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু আপাতত থাইল্যান্ডের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপকেই নিজেদের ‘বিশ্বকাপ’ হিসেবে দেখছেন দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘সবাই বলাবলি করছে এই টুর্নামেন্টে প্রথম তিন দলের মধ্যে থাকলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে। স্বপ্ন আমিও দেখি। আমার মেয়েরাও দেখে। তবে বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের জন্য থাইল্যান্ডের আসরটাই যে “বিশ্বকাপ” ।’

এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ খেলবে ‘বি’ গ্রুপে। প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। তিনটি দলই শক্তিশালী। গ্রুপ সঙ্গীদের দেখেই গোলাম রব্বানীর কাছে মনে হচ্ছে তাঁর দল ‘বিশ্বকাপে’ই খেলতে যাচ্ছে, ‘আমাদের গ্রুপের দুটি দল জাপান ও উত্তর কোরিয়া শেষ আসরে বিশ্বকাপে খেলেছে। অন্য দল অস্ট্রেলিয়া না পারলেও, এবার বিশ্বকাপ খেলার দাবিদার তারা। ফলে বিশ্বকাপের আমেজই তো আমরা পাব নিজেদের গ্রুপে।’

বাছাইপর্বে বেশ দাপট দেখিয়েই চূড়ান্তপর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। হারিয়েছে ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও কিরগিজস্তানের মতো দেশকে। ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া মেয়েরা কিরগিজদের হারিয়েছিল ১০-০ গোলের সুবিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড কোনো পর্যায়ে কোনো দলেরই নেই।
কিন্তু চূড়ান্তপর্ব অন্য রকমই। অনেক বেশি কঠিন। প্রতিপক্ষ এখানে আসবে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই। বাংলাদেশও কম প্রস্তুত নয়। এক বছর ধরে কঠোর অনুশীলনের মধ্যে আছে মেয়েরা। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়েছে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এর মধ্যে জাপানে দুবার। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মূলত প্রতিপক্ষ দলগুলোর শক্তিমত্তা নিয়েই চলছে কাঁটাছেড়া আর বিশ্লেষণ। মাঠের অনুশীলনের পাশাপাশি তাত্ত্বিক ক্লাসে দেখানো হচ্ছে প্রতিপক্ষদের ভিডিও। সবকিছু মিলিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে মেয়েদের অনেক প্রস্তুতি, অনেক ত্যাগ।

গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বটা ছিল বাংলাদেশের জন্য সোনায় মোড়ানো। পাঁচ ম্যাচে সব মিলিয়ে ২ গোল হজমের বিপরীতে ২৬ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। চূড়ান্তপর্বে এর কিছু ঝলক দেখাতে পারলেই বাংলাদেশের সার্থকতা। আর বিশ্বকাপের হাতছানিটা তো থাকছেই।

বাংলাদেশের খেলার সময়সূচি
১১ সেপ্টেম্বর , বাংলাদেশ বনাম উত্তর কোরিয়া
১৪ সেপ্টেম্বর , বাংলাদেশ বনাম জাপান
১৭ সেপ্টেম্বর , বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া