ফেসবুক পরিচয় পাকিস্তানে ভারতীয় তরুণী, বন্দুকের নলের মুখে বিয়ে
‘পাকিস্তান একটা মৃত্যুফাঁদ’- দেশে ফিরে এভাবেই পাকিস্তান সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন ভারতীয় এক তরুণী। উজমা আহমেদ নামের ওই তরুণী দিল্লি থেকে ইসলামাবাদ যান তাহির আলি নামে ফেসবুকে পরিচিত হওয়া এক বন্ধুর বাড়িতে।
পাকিস্তানে পৌঁছে সেখানে মুখোমুখি হন অন্ধকার এক জগতের। গত ১ মে ইসলামাবাদে পৌঁছার দুই দিন পর তাহির তাকে জোর করে বিয়ে করেন। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন উজমা। পরে পাক আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সুবিচার পেয়েছে এই ভারতীয় তরুণী।
উজমা আহমেদকে পাকিস্তানের আদালত ভারতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজে টুইট করে বৃহস্পতিবার সকালে উজমার দেশে ফেরার কথা জানান। দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে অফিসে তাকে স্বাগত জানান সুষমা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানান উজমা। এসময় তার স্বামী এবং মেয়ে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উজমা বলেন, ‘পাকিস্তানে ঢোকাটা সহজ। সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব। পাকিস্তান হল একটা মৃত্যুফাঁদ। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের পর যে নারীরা সেখানে গেছেন, তাদের আমি দেখেছি। তারা ভয়ঙ্কর খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। ওখানে প্রতিটি ঘরে একজন পুরুষের দুই, তিন এমনকি চারজন স্ত্রী রয়েছে।’
এখনও অনেক নারী তার মতোই পাকিস্তানে বন্দি রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন উজমা। তিনি বলেন, ‘আরও কিছুদিন ওখানে থাকলে আমি মারা যেতাম। টোপ দিয়ে ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে মেয়েদের নিয়ে যায়।’ শুধু মেয়েরা নন, ছেলেরাও সে দেশে নিরাপদ নয়।
১ মে ইসলামাবাদ যান উজমা। ৭মে থেকে ভারতীয় হাই কমিশনে ছিলেন তিনি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে খবরের শিরোনামে আসেন উজমা। দিল্লির বাসিন্দা উজমা গত ৭ মে পাকিস্তানের ভারতীয় হাই কমিশনে জানান, তাহির আলি নামে ওই পাক যুবক তাকে জোর করে নিকাহনামায় সই করিয়েছেন। তাহির তার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আটকে রেখেছেন বলে উজমা জানিয়েছিলেন।
উজমা জানান, ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল তাহিরের সঙ্গে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের সূত্রেই দিল্লি থেকে ইসলামাবাদ যান উজমা। কিন্তু ইসলামাবাদে তাহিরের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বন্দুকের মুখে পড়তে হবে এবং তাহিরকে বিয়ে করতে হবে, এমনটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছায় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে। ২০ বছর বয়সী এই ভারতীয় তরুণীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার তাকে ভারতে ফেরার অনুমতি দেয় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি। ফেরার সময় যাতে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। রায় ঘোষণার পর উজমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাহির। কিন্তু তাতে রাজি হননি ওই ভারতীয় তরুণী। আনন্দবাজার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন