বনানীর সেই ধর্ষকদের ধরতে সম্ভাব্য সব স্থানেই অভিযান চলছে
বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য সব স্থানেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ) মো. মাসুদুর রহমান। বুধবার তিনি বলেন, ‘আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন। তাছাড়া তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে ব্যাপারেও সজাগ রয়েছে পুলিশ। আশা করছি, শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।’খবর পরিবর্তনের।
এর আগে মঙ্গলবার আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদকে (২৬) ধরতে তাদের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সাফাতকে বাসায় পাওয়া যায়নি।
অভিযান প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক আবদুল মতিন বলেন, ‘সাফাতকে গ্রেফতারে গুলশান-২ এর ৬২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাসায় অভিযান চালানো হয়। শুধু সাফাত নয়, প্রত্যেকের বাসায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে।’
এদিকে সন্ধ্যায় বনানী থানা থেকে মামলা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করেছে বনানী থানা পুলিশ।
দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামির একজন সাদমান সাকিফ (২৪) রেগনাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হোসাইন জনির ছেলে। সাকিফ নিজেও ওই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরদের মধ্যে একজন। প্রথমে সাকিফকে পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
গত ২৮ মার্চ ‘দ্য রেইন ট্রি হোটেলে’ জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। গত শনিবার রাতে ভুক্তভোগীদের একজন বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। সাফাত ও সাদমান ছাড়াও ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী।
সেদিন যা ঘটেছিল দ্য রেইনট্রি হোটেলে
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন উল্লেখ করেছেন, ‘আসামিরা ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত বনানীর দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে আমাকে, আমার বান্ধবী এবং এক বন্ধুকে আটকে রেখে সবাইকে মারধর করে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করে।’
‘রুমের মধ্যে নেশাজাতীয় মদ্যপান করে আমাকে এক নম্বর আসামি এবং আমার বান্ধবীকে দুই নম্বর আসামি জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে।’
‘তিন নম্বর আসামি সাকিফকে দুইবছর ধরে চিনি। তার মাধ্যমে এক নম্বর আসামির সঙ্গে পরিচিত হই। গত ২৮ মার্চ তার জন্মদিন উপলক্ষে এক নম্বর আসামির গাড়িচালক ও দেহরক্ষীকে পাঠিয়ে আমাদের নিকেতন হইতে বনানীর রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।’
হোটেলে ছাদে বড় অনুষ্ঠান হবে বলে আমারদের নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে ওই ছাত্রী এজাহারে বলেন, ‘যাওয়ার পর ওরা ছাড়া আর কোনো লোক দেখি নাই। পরবর্তীতে জোরপূর্বক ধর্ষণের সময় গাড়িচালককে ভিডিও করতে বলে সাফাত।’
‘ঘটনার প্রতিবাদের কথা বললে নাঈম আমাকে মারধর করে। পরবর্তীতে আমাদের বাসায় দেহরক্ষী পাঠিয়েছিল আমাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। এতে ভয় পেয়ে যাই এবং লোক লজ্জা ও মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করতে বিলম্ব হয়।’
দুই তরুণীর ফরেনসিক টেস্ট করতে মেডিকেল বোর্ড গঠন
ধর্ষণের শিকার ওই দুই তরুণীর ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ছাড়া কমিটির অন্যান্যরা হলেন- ডা. কবির সোহেল, ডা. মমতাজ আরা, ডা. নীলুফার ইয়াসমিন ও ডা. কবিতা সাহা।
রোববার দুপুরে ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে দুই নারী পুলিশ সদস্য ওই দুই তরুণীকে পরীক্ষার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসেন। তরুণীদের মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ পরীক্ষাগুলো করা হবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে আশা করছি।
এদিকে ধর্ষকদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন। যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে। তাদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোববার পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই তরুণীর বন্ধু। জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করে হোটেলে নেওয়ার পর সাফাত ও নাঈম হোটেলের একটি কক্ষে নিয়ে রাতভর দুই তরুণীকে আটকে রেখে মারধর এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। আসামিদের অপর তিনজন ধর্ষণে সহায়তা ও ভিডিও ধারণ করেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন