বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ বলে বিদেশে প্রচার!
‘উই নিড ইয়োর হেল্প প্লিজ। লেট দ্য ওয়ার্ল্ড নো হোয়াট ইজ গোয়িং অন ইন বাংলাদেশ?’ (আপনাদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন। বিশ্বকে জানতে দিন, বাংলাদেশে কী হচ্ছে?) শিরোনামের ওই খুদে বার্তাটি দুই দিন আগে ঢাকা থেকে গেছে বেইজিংয়ে চায়না ডেইলির প্রতিবেদক লি লেইর কাছে। ওই বার্তায় দাবি করা হয়েছে, চার শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। চার ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশে সরকার চুপ।
বাংলাদেশের একজন সাংবাদিকের কাছে লি লেই পরে জানতে চান, ওই বার্তার সত্যতা কতটুকু? কারণ বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষার সংবাদমাধ্যমের খবরাখবর ঘেঁটে তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন সরকার এটি নাকচ করেছে। আর বাংলাদেশি গণমাধ্যমও একে গুজব বলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনলাইন থেকে বা বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের ই-মেইল ঠিকানা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের বার্তা পাঠানো হয়েছে। ই-মেইল পাঠানো ব্যক্তিদের অনেকে নিজেদের আক্রান্ত হিসেবে দাবি করে এমন কিছু ভিডিও ও ছবি পাঠিয়েছে, যার সত্যতা নিয়ে এ দেশেই প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু বিদেশি সাংবাদিকই নন, বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর, পররাষ্ট্র দপ্তরসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্যাগ করে আন্দোলন, হামলার খবর দেওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা চেয়েছে অনেকে। এর কারণ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় টুইটারে বার্তাগুলোতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন, হামলা ও সংঘাতের খবর দেওয়ার সময় অনেকেই ‘জেনোসাইড’ (গণহত্যা) লিখে বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী চেয়েছে।
শাহীন নামের একজন তাঁর টুইটারে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে উল্লেখ করে লিখেছেন, জাতিসংঘের উচিত বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানো। ফারিয়া রূপম নামের একজন তাঁর টুইট বার্তায় আহত একজনকে রিকশায় করে নিয়ে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘#rape #murder #attack #justice #slaughter #massacre #genocide #safe_road_movement #save_Bangladesh #save_our_brothers_and_sisters #BBC #CNN #Aljazeera #USA_Today #The_New_York_Times #ABC_News #NBC_News’ (ধর্ষণ, হত্যা, হামলা, ন্যায়বিচার, জবাই, হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বাংলাদেশকে বাঁচান, আমাদের ভাই-বোনদের বাঁচান, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, ইউএসএ টুডে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এবিসি নিউজ, এনবিসি নিউজ)।
দ্য কান্ট্রিস মিসটেক (idontstananyone)) নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের মতো এ দেশেও গণহত্যা চলছে।
প্রকৃত নাম ও ছদ্ম নামে এসব টুইট বার্তা দেওয়া ব্যক্তিরা আন্দোলনকারী বা আন্দোলনের প্রতি সমর্থক অনলাইনকর্মী বলে জানা গেছে। তবে রাজনৈতিক পরিচয় আছে, এমন অনেক ব্যক্তির টুইট বার্তায়ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও সরকারগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিএনপির বিশেষ দূত ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে জাহিদ এফ সরদার সাদী বেশ কয়েকটি টুইট বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে নৃশংসতা, ধর্ষণ হয়েছে বলে দাবি করে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস, পররাষ্ট্র দপ্তর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা লিসা কার্টিসকে ট্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশে বিদেশি দূতাবাসগুলোর ফেসবুক ও টুইটার পেজেও অনেকে হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেজের মন্তব্য অংশে গতকাল সন্ধ্যায় এ ধরনের কয়েকটি বার্তা দেখা গেছে। অনেকে আবার বিদেশি দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এ দেশের সরকারের বিষোদগার করেছে। অনেকে তাদের বার্তায় বীভৎস ছবি প্রকাশ করে সিরিয়া পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, অতীতের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো এবারের ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা পরিচিত ও অজ্ঞাতপরিচয় বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নানা বার্তা পাচ্ছে। তবে যাচাই-বাছাই করেই তারা সেগুলো আমলে নেয়।
বিদেশি সংবাদমাধ্যম, সরকার ও সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনলাইনে বার্তা পাঠানো প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, বার্তা পাঠানো ব্যক্তিরা হয়তো এ দেশের ভেতর থেকে প্রত্যাশিত সাড়া পাচ্ছে না বা বিদেশিদের জানানোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। বার্তা প্রেরকরা হয়তো একে আন্তর্জাতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে। তবে সব বার্তাকেই যে তাঁরা যথার্থ মনে করেন, এমনটি নয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন