বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রবেশ করছে চীন

বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) কৌশলগত শেয়ার কিনতে চীনা কনসোর্টিয়ামকে অংশীদার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নেয়া হয়েছে। এখন শুধু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) এর অনুমোদনের অপেক্ষা।

প্রসঙ্গত, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পরে ডিএসইর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার নেয়ার জন্য মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বা ব্রোকারেজ মালিকরা স্টক এক্সচেঞ্জটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকবেন। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার পরবর্তীতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে।

এজন্য কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এতে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে ছিল চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম।

দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাতেও রয়েছে তারা।

সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

এরপরই ভারতের কনসোর্টিয়ামকে চীনের দেয়া প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৭ টাকা কম দরে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয় ডিএসইকে। এসইসির এক কমিশনার এই তদ্বির করেন। তদ্বির করতে ভারতীয় কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেন। চীনা কনসোর্টিয়াম বেশি দরে শেয়ার কিনতে চাইলেও তাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করা হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী, চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা।

অন্যদিকে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এনএসইর নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ২৫ দশমিক এক শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি তারা কারিগরি সহযোগিতার কথা বললেও কত টাকা ব্যয় করবে তার উল্লেখ করেনি।

পরে কৌশলগত অংশীদার করতে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের দেয়া প্রস্তাব ডিএসই গ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক হইচই হয়। প্রশ্নের মুখে পড়েন ওই কর্মকর্তা। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কম দরে লবিং করায় সরকারের কাছেও সমালোচনার শিকার হন।

সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন ওই কমিশনার। এজন্য কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা ডিএসই শেয়ার চীনের পরিবর্তে ভারতকে দিয়ে সরকারের আরও কাছে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। ভারতীয় লবিকে উন্নয়নের সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। চীনকে শেয়ার দেয়ার ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়ায় সম্প্রতি ডিএসইর এমডিকে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তিনি গণমাধ্যমের কর্মীদেরও হুমকি দিয়েছেন।

এ খবর আসার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এসইসির এ পদক্ষেপের বিষয়ে ‘ডিএসইর কৌশলগত মালিকানার অংশীদার বাছাইয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপে টিআইবির উদ্বেগ: জড়িতদের জবাবদিহি ও সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান’শীর্ষক এক বিৃবতি দেয়।

টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন যোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।”

এরপরই ডিএসইকে এসইসি চাপ দেয় ভারত ও চীন দুই দেশকেই খুশি করার জন্য। কিন্তু এসইসির সেই স্বপ্নে গুড়ে বালি দিয়ে কৌশলগত অংশীদার করতে চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর পর্ষদ সভায় এ অনুমোদন নেয়া হয়।

সভা শেষে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের জন্য ডিএসইর প্রস্তাব ‘শিগগিরই’ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পাঠানো হবে।

ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য আশা করছেন, কৌশলগত অংশীদার পেলে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির তালিকাভূক্তি বাড়বে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে।