বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা চুক্তি ঠেকাতে মমতার নতুন কার্ড?
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তির পথে গত ছয়-সাত বছর ধরে প্রধান অন্তরায় যিনি, সেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবার আত্রাই নদীকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন হাতিয়ার করতে চাইছেন। তার সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছে, বাংলাদেশ আত্রাই নদীর উজানে বাঁধ দেওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট শহর তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে – কাজেই ভারত যেন অবিলম্বে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রতিকার চায়।প্রতিবেদন বিবিসি বাংলার।
পার্লামেন্টের আসন্ন অধিবেশনেই তার দলের এমপিরা আত্রাই ইস্যুটি তুলবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে বিজেপি বলছে, তিস্তা চুক্তি ভণ্ডুল করতে এটা তার নতুন কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।
আত্রাই বা আত্রেয়ী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদীর অন্যতম – তবে এটি সেই বিরল নদীগুলির মধ্যে পড়ে যা প্রবাহের একটা পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভেতর ঢুকেছে।
কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় যেখানে নদীটি ভারতে প্রবেশ করেছে, তার আগে ‘উজানে নদী-বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশ অন্যায়ভাবে আত্রাই থেকে জল টেনে নিচ্ছে’ – মাস-খানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রথম এই অভিযোগ তোলেন কোচবিহারের এক জনসভায়।
তিনি সেখানে বলেন, “আত্রাই নদীতেও সমস্যা হচ্ছে – ওখানে বাঁধ দিয়ে জল আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের বন্ধু সরকারকে অনুরোধ করব আত্রাই নদীর জল কেন বাঁধ দিয়ে আটকাচ্ছেন? ওটা ছেড়ে দিন। অমাদের বালুরঘাটের লোকেরা জল পাচ্ছে না!”
কিন্তু আত্রাই নিয়ে রাজ্য সরকার শুধু প্রতিবেশী দেশের বন্ধু সরকারকে মৌখিক অনুরোধ জানানোতেই থেমে থাকেনি – জেলা প্রশাসনকে দিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করিয়ে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও নালিশ জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে যাতে আত্রাইয়ে জলের প্রবাহ আবার স্বাভাবিক করে তোলা যায়, সেই দাবিও জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বালুরঘাট কেন্দ্রের এমপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের অর্পিতা ঘোষ সমস্যাটা ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে বলেন, “আত্রাই নদীর উৎস ভারতে হলেও তারপর সেটা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারপর আবার ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ঢুকে বাংলাদেশে চলে গেছে। এখন নদীর বাংলাদেশ অংশটায় তারা সম্ভবত ভারতের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই বাঁধ দিয়ে দিয়েছে, ফলে নদীটা যখন দক্ষিণ দিনাজপুরে ঢুকছে তখন সেখানে সব জল শুকিয়ে গেছে!”
“ঘটনাটা গত এক-দেড় বছরের। আমি যখন কিছুদিন আগে সংসদে আত্রাইতে ড্রেজিং করানোর দাবি জানাই, তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আমাকে চিঠি দিয়ে বলেন ড্রেজিং করিয়ে কোনও লাভ হবে না – কারণ উজানে বাঁধ বসিয়ে বাংলাদেশই নদী থেকে জল টেনে নিচ্ছে। ফলে এটা একটা আন্তর্জাতিক বিষয়, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টা দেখার জন্য অনুরোধ করেছি,” জানাচ্ছেন অর্পিতা ঘোষ।
দলের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাওয়ার পরই আত্রাই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
অর্পিতা ঘোষের মতে, আত্রাই নদী হল বালুরঘাট বা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ‘হৃদয়’ – কাজেই সেই নদীতে যখন একফোঁটা জল নেই, হৃদয় শুকিয়ে গিয়ে গোটা জেলার জন্য তা একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ও পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দল বিজেপি মনে করছে – গোটা বিষয়টা আসলে তিস্তা চুক্তি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটা অপচেষ্টা মাত্র।
রাজ্যে দলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জয়প্রকাশ মজুমদার বিবিসিকে বলেছেন, “বাংলায় এটাকে আমরা বলি একটা ইস্যুকে গুলিয়ে দেওয়া। উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ বা গরিব কৃষক, যারা এলাকার ভূগোলটা ঠিকমতো জানেন না বা গোটা বিষয়ের প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও অবহিত নন – তাদের বিভ্রান্ত করতেই কখনও তিনি বলছেন তোর্সার জল নাও, কখনও বলছেন আত্রাই থেকে জল টেনে নেওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে। আসলে তিস্তা থেকে নজর ঘোরাতেই তিনি এসব বয়ানবাজি করছেন। ”
“আসলে ভারতের কোনও উপকার বা অপকার করা কিংবা বাংলাদেশেরও কোনও উপকার বা অপকার করা – এর কোনওটাই মমতা ব্যানার্জির লক্ষ্য নয়। তার একমাত্র লক্ষ্য হল ভোটের রাজনীতি – তিস্তা ইস্যুতে এটা প্রমাণ করা যে তার চেয়ে বড় উত্তরবঙ্গ-প্রেমী আর কেউ নেই,” বলছিলেন মি মজুমদার।
আত্রাই নিয়ে মমতা ব্যানার্জির উদ্বেগ কতটা আন্তরিক, আর কতটা তিস্তা চুক্তি ঠেকানোর উদ্দেশ্যে – সে প্রশ্ন তাই উঠছে ভারতের ভেতর থেকেই।
কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রগুলো বলছে, দল-নেত্রী তাদের কথা দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পাওনা জল আদায়ে তিনি একেবারে শেষ দেখে ছাড়বেন!
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন