বাড়ি ফিরছেন সেই শতবর্ষী ‘মা’
ভাত খেতে চাওয়ায় ছেলের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার আলোচিত সেই শতবর্ষী বৃদ্ধা ‘মা’ তসলিমা খাতুন এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ওই বৃদ্ধা মা নিজ বাড়িতে ফিরবেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানান, গত ১৬ আগস্ট জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল হরিপুর উপজেলা থেকে নির্যাতিত বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ ৪০ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর ওই মা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আশা করছি মঙ্গলবার (আজ) বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন তিনি।
ডা. শুভেন্দু ও ডা. তোজাম্মেল হোসেন জানান, বৃদ্ধা মা তসলিমা খাতুন বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ, চোখের উপরে আঘাতের কারণে সুস্থ হতে বেশি সময় লেগেছে।
তসলিমা খাতুনের ছোট মেয়ে শরিফা জানান, হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সের আন্তরিকতার প্রচেষ্টার কারণে আমার মা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া ডিসি স্যার, সাংবাদিক ভাইরা নিয়মিত মায়ের খবর রেখেছেন। মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য তারা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
সুস্থ হয়ে ওঠার অনুভূতির কথা জানতে চাওয়া হলে বৃদ্ধা মা জানান, ডিসি আমাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে নতুন জীবন দিয়েছে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি ওষুধ, প্রয়োজনীয় খাবার সব কিছুই করেছে। শুনেছি আমার থাকার জন্য নতুন একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
তিনি আরো জানান, ডিসি আমার বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিটি মায়ের ঘরে যেন এমন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ তাকে আরো ভালো কাজ করার শক্তি দান করেন।
নির্যাতনকারী ছেলে দবির উদ্দিনের ওপর কোনো অভিযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সন্তান যত বড় অপরাধ করুক নাই কেন, মায়ের কাছে তা কিছুই না। বৃদ্ধ বয়সে সেই আমার দেখাশোনা করেছে। আমার ছেলে জেল খেটে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। পৃথিবীর সকল মায়ের সন্তানেরা ভালো থাকুন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, বৃদ্ধা মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । আজ তাকে নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। তার সুস্থ হওয়ার পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সন্তানের দ্বারা মা আহত হবেন, এটা কখনোই কাম্য নয়। একজন গর্ভধারিণী মায়ের সন্তান জন্মদানের কষ্ট আমরা কখনো অনুধাবন করি না। এই নির্যাতিত মাকে দেখে সমাজের প্রতিটি সন্তান যেন শিক্ষা গ্রহণ করে, মাকে আঘাত করার অপরাধ কতটা অমানবিক। আসুন আমরা মানবিক হয়ে সমাজের সেবা করি।
তিনি আরো জানান, বৃদ্ধা মা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য ইতিমধ্যে একটি বাড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে আরো সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউমার কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতর্বষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
মাকে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই রাতে উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বৃদ্ধা মা তার সন্তানের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জানালে এবং ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত নির্যাতনকারী বড় ছেলে দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন