বাবা তুমি এগিয়ে যাও, মেয়ের শেষ কথাটুকুই কানে ভাসছে বাবার

‘‘বাবা, তুমি এগিয়ে যাও৷ ভিড়টা একটু কমে যাক৷ তার পর আমি আসছি৷’’ চোখ বন্ধ করলে এই কথাগুলিই এখন শুনতে পাচ্ছেন কিশোর ভারপে৷ আর তখনই বছর সাতান্নর এই প্রৌঢ়র মনে হচ্ছে কেন তিনি মেয়ের কথা শুনলেন? কেন থেকে গেলেন না মেয়ের সঙ্গে? তাহলে হয়তো শেষ চেষ্টা করতে পারতেন মেয়েকে বাঁচাতে৷ আর যতবারই কথাগুলো মনে পড়ছিল, ততবারই কেঁদে ফেলছিলেন কন্যাহারা এই পিতা৷

শুক্রবার সকালে মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন রোড রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে একজন শ্রদ্ধা ভারপে৷ দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বছর পঁচিশের শ্রদ্ধা ও তাঁর বাবা কিশোর সেন্ট্রাল মুম্বইয়ের পারেল রেল স্টেশনে ছিলেন৷ সেখান থেকেই এলফিনস্টোন রেল স্টেশনের দিকে যাওয়ার ফুটব্রিজে তাঁরা ওঠেন৷ তখন ভিড় এতটাই ছিল, কিশোর ভারপে মেয়ের থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ তখনই শ্রদ্ধা তাঁকে এগিয়ে যেতে বলেন বলে জানান কিশোর ভারপে৷ শুক্রবার কেইএম হাসপাতালের মর্গের বাইরে কিশোরের এক আত্মীয় ভীমরাও ধূলপ জানান, এর পর তন্নতন্ন করে খোঁজেন মেয়েকে৷ শেষে জানা যায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শ্রদ্ধার৷

এলফিনস্টোন রোডের লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডে কাজ করেন কিশোর৷ শ্রদ্ধাও সেখানে কাজ করতেন৷ থানের ভিট্টলওয়াড়িতে তাঁদের বাড়ি৷ রোজ তাঁরা সেখান থেকে ট্রেনে যাতায়াত করতেন৷ শুক্রবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা পারেল রেলস্টেশনে পৌঁছে যান৷ তখন ফুটব্রিজে ব্যাপক ভিড় ছিল৷ কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়৷ আর তাতেই শ্রদ্ধা ও কিশোরের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়৷ ভীমরাওয়ের বক্তব্য, শ্রদ্ধা ভেবেছিল ভিড় কমলে এগোবে৷ তাই বাবাকে এগিয়ে যেতে বলে৷ সেটাই যে এত বড় ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, তা কেউই বুঝতে পারেনি৷ ভিড়ের মধ্যে থেকে কিশোর মেয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন৷ কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি৷ কিশোর জানান, মেয়ের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেন৷ কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে৷-কলকাতা২৪