বাবা বেঁচে নেই, মা ও ছেড়ে চলে যান প্রতিবন্ধী সোহাগকে
মায়ের প্রতি ভিষণ অভিমান ও ক্ষোভ সোহাগের। কেননা মায়ের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ কোনটাই পায়নি সে। বরং বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান, ফেলে যান সোহাগসহ তিন সন্তানকে।
সোহাগের সাথে দেখা প্রতিবেদকের মঙ্গলবার(১৫আগস্ট) বিকেল ৩টায় রংপুর চিড়িয়াখানায়। সোহাগের সাথে কথা তার জীবনের গল্প নিয়ে। সোহাগ জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। সুন্দর মুখঅবয়ব হলেও পায়ের সমস্যার কারনে হাটতে কিংবা দাঁড়াতেও পারেন না। দুই হাতের উপর ভর দিয়ে হাটতে হয়। এভাবে বেশিক্ষণ হাঁটা যায় না। হাত ব্যাথা করে। মাঝে মাঝে হাত ফুলে যায় তার।
সোহাগের বাড়ি রংপুর নগরীর সন্নাসীর দিঘি। সোহাগ যখন ছোট তখন তার বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পরেই মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। বড় হতে থাকে আর ধীরে ধীরে মায়ের কথা জানতে পারে। মা তাদের ছেড়ে আবারো বিয়ে করছে, সে বিষয়ে জানতে পারে। অন্য ছেলে মেয়েদের মা কে, দেখে আর নিজের মায়ের কথা মনে করার চেষ্টা করে। যখন সব কিছু বোঝে সোহাগ, তখন মায়ের সাথে কয়েকবার চেষ্টা করেছিলো কথা বলার। কিন্তু মা এতে সাড়া দেননি। উল্টো মায়ের দ্বিতীয় স্বামী বকাঝকা করেছে, একবার গায়ে হাতও তুলেছিলো সোহাগের। যার কারনে মায়ের প্রতি সোহাগের অনেক বেশি ক্ষোভ, অভিমান।
সোহাগরা দুই ভাই এক বোন। বোন বড়, সোহাগ মেঝো। সোহাগের ছোট এক ভাই। দাদির কাছে সংসারে উঠে তারা। দাদি ভিক্ষা করে তাদের খাওয়ায়। সোহাগের একটু বয়স হলে সেও দাদির সাথে ভিক্ষা করতে বের হয়। সোহাগ ও দাদির ভিক্ষা দিয়েই তাদের সংসার চলে।বর্তমানে দাদির কোমর ভাঙ্গার কারনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। টাকার অভাবে ভালোমতো ঔষধ, চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না সোহাগের দাদির।
সোহাগের এখন বয়স ১৫ বছর।
তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই মাদ্রাসায় পরে। সোহাগই ভিক্ষা করে সংসার চালায়। প্রতিদিন ভিক্ষা করে দুই থেকে তিনশত টাকা আয় হয়। বেশি হাটলে বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায় কিন্তু বেশি হাটলে হাতের ব্যথা হয়, তাই বেশি হাটে না সোহাগ। যা আয় হয়, তাই দিয়েই সংসার চলে তার। সোহাগ রুটিন করে ভিক্ষা করে। সপ্তাহের দুইদিন রংপুর চিড়িয়াখানায় ভিক্ষা করে। বাকী দিন অন্যান্য স্থানে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে।
রংপুর চিড়িয়াখানার ইজারাদার হযরত আলী বলেন, ছেলেটা দেখতে কত সুন্দর। আল্লাহ তায়ালা তাকে পা দুটো দিয়েছেন তবে, সে পা দিয়ে হাটাঁ যায় না। ছেলেটা রংপুর চিড়িয়াখানায় আসে। তাকে দেখলে কষ্ট লাগে। চিড়িয়াখানার ভিতরে ভিক্ষা করার অনুমতি দেই না। কিন্তু ওকে বাধা দিতে পারি না। ও কাউকে বিরক্ত করে না, মানুষ দয়া করে এমনিতেই সহযোগিতা করে।
সোহাগ প্রতিবেদককে বলেন, মায়ের ভালোবাসা পাইনি। মায়া মমতা, স্নেহ কি জিনিষ আমরা জানি না। ভিক্ষা করি খাই। দাদি আমাদের অভিভাবক। দাদিও অসুস্থ। আপনারা এগিয়ে আসলে, আমি আমার দাদিকে সুস্থ্য করে তুলতে পারবো। সারাদিন কষ্ট করি ভিক্ষা করি। একটা হুইল চেয়ার হলে আমার কষ্ট কমতো। কিন্তা হুইল চেয়ার কেনার টাকা নাই। কেউ হুইল চেয়ার কিনে দিলে, চেয়ারে বসে ভিক্ষা করতে পারতাম। এসময় সোহাগ অঝোরে কেঁদে ফেলে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন