বাসায় ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে ৪ টুকরো করে খুনিরা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভকে বাসায় ডেকে নিয়ে চাচা ও তার শ্যালক ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে মরদেহ বাথরুমে রেখে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে চার টুকরো করে কালো রঙের লাগেজে ভরা হয়।

এরপর রাতের আঁধারে একটি প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা সড়কের মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীর কচুরিপানাতে মরদেহভর্তি লাগেজটি ফেলে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের একদিন পরই কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার মূল হোতা সৌরভের চাচা ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এসব লোমহর্ষক তথ্য দেন।

পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ ও চালক আব্দুল হান্নান আকন্দকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাচা ইলিয়াস ও তার শ্যালক ফারুক হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁঞা জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ তারাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর পুত্র সৌরভের সঙ্গে তারই চাচাতো বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকে। দুই পরিবারই এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় তাদের মধ্যে মান-অভিমান চলছিল।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিন বছর আগে ইউসুফ আলীর ভাই ইলিয়াস আলীর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ইভা আক্তারের সঙ্গে নগরীর এক চিকিৎসকের কানাডা পড়ুয়া পুত্র আব্রাহামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করে। কিন্তু সৌরভ ইভার অন্যত্র বিয়ের বিষয়টি মানতে পারেনি।

পরিবারকে না জানিয়ে গত ১২ মে ইভা ও সৌরভ গোপনে বন্ধুদের নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ খবর জানাজানি হলে ইভার পরিবার মেনে নেয়নি; যার ফলশ্রুতিতে ইলিয়াছ তার মেয়ে ইভাকে গত ১৬ মে কানাডায় পূর্বের স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সৌরভ ১ জুন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসে ইভার পূর্বের শ্বশুরের কাছে।

ওই চিকিৎসকের কাছে সৌরভ তাদের প্রেম-ভালোবাসার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরে চলে যায়। বিষয়টি ইলিয়াস জানতে পেরে পুত্র মৃদুলকে দিয়ে মোবাইল ফোনে ময়মনসিংহ নগরীর গোহাইলকান্দি ভাড়া বাসায় ডেকে নেয় সৌরভকে। সেখানে ইলিয়াছ তার শ্যালক ফারুককেও ডেকে আনে। এরপর দুজনে মিলে সৌরভের হাত-পা বেঁধে মাথায় ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাতে হত্যা করে।

পরে মরদেহ বাথরুমে রেখে নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার একটি দোকান থেকে কালো রঙের একটি লাগেজ কিনে আনেন এবং বাথরুমে রাখা মরদেহটি থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মাথা ও পা দুটি আলাদা করে মোট চার টুকরো মরদেহ সেই লাগেজে ভরে। খুনের মোটিভ বা খুনিরা যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য হত্যাকারী ইলিয়াস ও ফারুক গ্লোভস ব্যবহার করে এবং আঙুলের ছাপ কেটে নষ্ট করে ফেলে।

রাতেই একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় এনে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি তুলে নগরীর আকুয়া বাইপাসসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অবশেষে ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা সড়কের মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীর কচুরিপানাতে মরদেহভর্তি লাগেজটি ফেলে আসে।

পুলিশ সুপার জানান, মরদেহটি উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের জন্য তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর সৌরভের বোন ও মামা খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহটি শনাক্ত করে। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে নতুন ওই লাগেজের উৎস খুঁজে বের করে।

তিনি জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যাকারী নিশ্চিত করে ঢাকার একটি কলেজ হোস্টেল থেকে ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া থেকে সৌরভের চাচা ইলিয়াসকে গ্রেফতার করে। তাদের কথামতো পুলিশ প্রাইভেটকার চালক আব্দুল হান্নান আকন্দকে গ্রেফতার করে এবং গাড়িটি জব্দ করে।

উল্লেখ্য, গত রোববার ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা সেতুর নিচে সুতিয়া নদীতে একটি কালো ব্যাগ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে তদন্তে নামে। এ ঘটনায় সৌরভের পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।