বায়ার্নকে বিদায় করে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

প্রথম লেগেই ২-১ গোলে বায়ার্নের মাঠ থেকে জিতে এসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই জয়ই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছে দিল স্প্যানিশ জায়ান্টদের। কারণ, ফিরতি লেগে রিয়ালের মাঠে ২-২ গোলে খেলা ড্র হলেও দুই লেগ মিলিয়ে রিয়ালের জয় ৪-৩ ব্যবধানে। ফলে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ। লজ ব্লাঙ্কোজদের হয়ে একাই জোড়া গোল করেন করিম বেনজেমা।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মূলত আজ খেলেছে বায়ার্ন মিউনিখ। দুর্ভাগ্য তাদের। গোলরক্ষক এসভেন উলরেইখের অমার্জনীয় একটি ভুলের কারণেই দ্বিতীয় গোলটি হজম করতে হয়েছিল বায়ার্নকে।

ম্যাচের ৪৬তম মিনিটে কোরেন্তিন তোলিসো ব্যাক পাস দিয়েছিলেন গোলরক্ষক উলরেইখের কাছে। আলতো পাসটি ধরতে গিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান উলরেইখ। সামনে আগুয়ান বেনজেমা। ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরতে গিয়েছিলেনও; কিন্তু সেই বল হাতগলে চলে গেল পেছনে। করিম বেনজেমা এই সুযোগ নষ্ট করার মতো মানুষ নন। দৌড়ে গিয়ে তিনি সেই বলটিকে আলতো টোকায় পাঠিয়ে দিলেন বায়ার্নের জালে।

ম্যাচে রিয়ালের ওটা ছিল ২ নম্বর গোল; কিন্তু এই অমার্জনীয় ভুলের কারণেই মূলত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখের। এরপর হামেশ রদ্রিগেজ একটি গোল করে বার্নাব্যুর ম্যাচটিতে দলকে সমতায় আনলেও সেটা ফাইনালে যেতে তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কারণ, গোল গড়ে পিছিয়েই ছিল বায়ার্ন।

দীর্ঘদিন পর কোচ এবং সমর্থকদের আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন করিম বেনজেমা। আগের ম্যাচে তো তাকে সাইড বেঞ্চেই বসিয়ে রাখা হয়েছিল। মাঠে শেষের দিকে নামানো হয়েছিল পরিবর্তিত হিসেবে। ফিরতি লেগে করিম বেনজেমা ছিলেন স্টার্টিং লাইনআপে। সেই প্রতিদানও দিলেন তিনি।

ম্যাচের শুরুতেই তো গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের তিন মিনিটেই জোসুয়া কিমিচ পুরো বার্নাব্যু গ্যালারিকে স্তব্দ করে দেন। থমাস মুলারের কাছ থেকেই রিয়ালের ডিবক্সে বলটি এসেছিল। সার্জিও রামোসের প্রচেষ্টায় এ যাত্রায় গোল থেকে বাঁচে রিয়াল। কিন্তু তিনি বলটি ক্লিয়ার করেননি। ফলে বল গিয়ে পড়ে কিমিচের পায়ে। ৬ গজ দূর থেকে দারুণ এক প্লেসিং শটে রিয়ালের জালে বল জড়িয়ে দেন কিমিচ।

লিড খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বায়ার্ন। খেলার ১১ মিনিটেই গোল শোধ করে দেয় রিয়াল। মাঝ মাঠ থেকে কোভাচিসের কাছ থেকে লম্বা একটি বল নিয়ন্ত্রণে নেন মার্সেলো। বক্সের একেবারে বাম পাশ থেকে বল বাতাসে ভাসিয়ে দেন তিনি। ভেসে আসা বলটিই খুঁজে পেল বেনজেমার মাথা। দারুণ এক হেডে তিনি বলটি জড়িয়ে দিলেন বায়ার্নের জালে।

গোল শোধ হয়ে গেলেও দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না ইয়ুফ হেইঙ্কেসের শিষ্যরা। তুমুল আক্রমণ শানিয়ে তোলে বায়ার্ন; কিন্তু রিয়ালের রক্ষণ কিংবা শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষকের কাছে এসে ঠেকে যাচ্ছিল। ১-১ ফল নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল। বিরতি থেকে ফিরেই তো গোলরক্ষক উলরেইখের মারাত্মক ভুলে গোল হজম করে বসে বায়ার্ন।

এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে বায়ার্নের সামনে হিসাব ছিল অন্তত ২-০ গোলে জিততে হবে। রিয়াল গোল দিয়ে দিলে, তখন ভিন্ন হিসাব দাঁড়াবে। মাদ্রিদ যখন ২টি গোল দিয়ে দেয়, তখন বায়ার্নের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় অন্তত তিন গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। কিন্তু বায়ার্ন দিতে পেরেছে কেবল ২টি গোল।

যদিও ২ গোল হজম করার পর রিয়াল মাদ্রিদের ওপর আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় বায়ার্ন। বল পজেশনের পরিমাণ দেখলেই সেটা বোঝা যায়। বায়ার্নের ৬৩ ভাগ তো, রিয়ালের ৩৭ ভাগ। তুমুল আক্রমণের ধারাবাহিকতায় ৬৩ মিনিটে গোল আদায় করে নেয় বায়ার্ন। রাফায়েল ভারানে শুরুতে চেষ্টা করেন বল ব্লক করতে। কিন্তু সুলে এবং হামেশ রদ্রিগেজ দু’জন মিলে পরাস্ত করেন রিয়াল গোলরক্ষক নাভসকে। যদিও ফিনিশার ছিলেন হামেশ রদ্রিগেজ। শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।