বায়ুদূষণে বাড়ছে হাঁপানির রোগী
বায়ুদূষণের মাত্রা গত এক দশকে ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে ভয়াবহ এই তথ্য। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিতসহ বিভিন্ন রোগ। শুধু ঢাকার শতকরা ২৫ ভাগ বাসিন্দা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত। বায়ুদূষণ সাম্প্রতিক সময়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। দূষণ রোধ ও চিকিৎসায় প্রতিবছর সরকার ও ব্যক্তির বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানায়, স্বাস্থ্যঝুঁকির সবচেয়ে বড় কারণ বায়ুদূষণ। বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মৃত্যুর মধ্যে একটির কারণ বায়ুদূষণ। বছরে ৯০ লাখ মানুষ এ কারণে মারা যাচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে হাঁপানিতে মৃত্যুর হার বেশি। এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। ২০১২ সালে বায়ুদূষণজনিত রোগে পাঁচ দেশে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা যায়। এ তালিকায় আছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত, দ্রুত নগরায়ণের ফলে বায়ু ও পানিদূষণ হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বায়ুদূষণের কারণে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি এক ধরনের বিপর্যয়ের মুখে। দূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাজেটের ওপর। রোগী বাড়ায় চাপ পড়ছে হাসপাতালেও। দেশে বর্তমানে হাঁপানি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত এক কোটি বলে তাদের অভিমত।
জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এ বায়ুদূষণ থেকে জনগণকে মুক্ত রাখতে সরকারের নেওয়া কার্যক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় নেই। সমন্বয়হীনতার কারণে কার্যক্রমগুলো থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার পালিত হবে বিশ্ব হাঁপানি দিবস। প্রতিবছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও দিবসটি নানা আয়োজনে পালিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারের জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কমপক্ষে বিশটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় দরকার। এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় থাকা উচিত।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার নির্মল বায়ুর জন্য শতকোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরপরও দূষণ কমছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের সময় ধুলা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এতেও বায়ুদূষণ বাড়ে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ইপিএ’র গত ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। গত দশ বছরে দেশটিতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৫৪ ধাপ নিচে নেমেছে।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশের সমান ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, বায়ুদূষণে ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সমান।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যৌথ উদ্যোগে বায়ুদূষণ ও এতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে গত বছর একটি জরিপ পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, বায়ুদূষণের ফলে ঢাকার ২৫ শতাংশ হাঁপানি, শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহ ও ফুসফুস সমস্যায় ভুগছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হাঁপানি। সব দেশ মিলিয়ে হাঁপানিতে ভুগছে ৩০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশে হাঁপানির রোগী ৮৫ লাখ। অন্যান্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে এ সংখ্যা এক কোটি বলে উল্লেখ করেছে। তবে দেশে হাঁপানি রোগীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
তথ্য মতে, হাঁপানির সরকারি চিকিৎসার জন্য দেশে ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, পাঁচটি বিভাগে পাঁচটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল আর জাতীয় বক্ষব্যাধি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল আছে। রোগটিতে আক্রান্তদের জন্য মূল চিকিৎসাস্থল ঢাকার মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন ও পুরনো রোগীরা প্রতিদিনই ভিড় জমায় এ হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টারে। সেখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন থেকে চার শ রোগী আসে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের অধিকাংশ এলাকার অ্যাজমা চিকিৎসা কেন্দ্রের অবস্থা ভালো নয়। বরিশাল বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবস্থা বেহাল। সেখানে জনবল সঙ্কট তীব্র। সব মিলিয়ে অনুমোদিত ১৬ পদের ৬টিই শূন্য। হাসপাতালে সহকারী নার্স পদে তিনজনের স্থলে একজনও নেই।
চাঁদপুর জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি ৫২ বছরেও হাসপাতালে রূপান্তর হয়নি। ক্লিনিকের মূল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসার বেশ কয়েকটি দরকারি যন্ত্রপাতি নষ্ট। কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। লোকবল সঙ্কট। একই অবস্থা বেশিরভাগ এলাকার ক্লিনিকের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন