বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় এসেছে ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চার লাখ ছাড়িয়েছে। নিবন্ধন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ পাঁচ হাজার ৮০১ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন।
উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-১, কুতুপালং-২, নোয়াপাড়া, থাইংখালী-১, থাইংখালী-২, বালুখালী ও টেকনাফ উপজেলার লেদা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ চলছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ১১ সেপ্টেম্বর। রোহিঙ্গারা যেন সারাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেই লক্ষ্যে এই ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
বাসস জানায়, প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজরের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হচ্ছে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য তিন ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রথমে রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্য নেয়া হচ্ছে। এতে থাকছে নাম, মা-বাবার নাম, দেশ, ধর্ম, লিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্য। এরপর তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আঙ্গুলের ছাপ। একই সাথে তাদেরকে একটি করে ছবি সম্বলিত নিবন্ধন কার্ড দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্যদেশে এসে দেশ-মাতৃকার পরিচয় সম্বলিত কার্ড পেয়ে খুশি রোহিঙ্গারা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে হাতে হলুদ ফিতায় ঝোলানো নিবন্ধন কার্ড নিয়ে বেরিয়ে আসছেন তারা।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্ট মোতাবেক ২৫ আগস্টের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ৬ লাখ ২১ হাজার। সেই হিসেবে আরও ২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন