বিএনপির ‘বৃহত্তর ঐক্য’ দেখে আ.লীগের আসন সমঝোতা
এখনই আসনের হিসাবের মীমাংসা চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত ১৪ দলের শরিকেরা। কিন্তু বিএনপির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে এবং তাদের জোটের ওজন বুঝে সমঝোতায় যেতে চায় আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি নিজেদের জোট ও নির্বাচনী মিত্র দলের সংখ্যা বাড়ানোর তৎপরতা আছে। এ জন্য তফসিল ঘোষণার আগে আসন সমঝোতায় যেতে চায় না ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, ১৪ দল জোটগতভাবে ভোট করবে—এটাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত বিষয়। এরপর এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির (জাপা) ভূমিকা বা অবস্থানও ক্ষমতাসীন দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আর কোন কোন দলের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে—সেটা নিয়ে আলোচনা হলেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। এসব হিসাব-নিকাশের বাইরে আওয়ামী লীগের মূল ভাবনায় আছে বিএনপির নির্বাচনে আসা না-আসা প্রসঙ্গ। আর নির্বাচনে এলে তাদের জোটসঙ্গী কারা, সেটিও ক্ষমতাসীন দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব হিসাব শেষ হওয়ার পর আসন বণ্টনের আলোচনা শুরু করতে চায় আওয়ামী লীগ, যদিও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের আগে এসব বিষয় স্পষ্ট হবে না।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়া চলমান। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য গড়ারও চেষ্টা আছে। এ অবস্থায় সরকারি দল আওয়ামী লীগও জোট ও নির্বাচনী মিত্রের সংখ্যা বাড়াতে তৎপর। ধর্মভিত্তিক ও বাম ঘরানার-সব দলের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপিসহ বিরোধীরা নির্বাচনে এলে ১৪ দল ও জাপার সঙ্গে ৬০টি আসন নিয়ে দর-কষাকষিতে নামবে আওয়ামী লীগ। ইসলামি কিছু দলকে টেনে এনে নির্বাচনী জোটে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা সফল হলে তাদেরও কিছু আসন দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ইসলামিক ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়াত মাওলানা ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি জোট থেকে গত বছর বেরিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে আওয়ামী লীগ। এর বাইরে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকীও সরকারি জোটের ব্যাপারে আগ্রহী। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বাধীন বাম ঘরানার আট দলের জোটের সঙ্গেও সরকারি দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এভাবে জোট ও মিত্রের সংখ্যা বাড়লে আরও ১০-২০টি আসনে ছাড় দিতে হবে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের জন্য ২২০ থেকে ২৩০ আসন রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯১,২০০১ ও ২০০৮ সালে যেসব আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে, সেগুলো হাতে রাখার ওপর জোর দেবে দলটি।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জোট, মহাজোট ও মিত্র বাড়ানোর জন্য দুই ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাম ঘরানার এবং ছোট দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে এই জোটের মধ্যে সমন্বয় করছেন। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ যোগাযোগ রাখছেন। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ধর্মভিত্তিক দল ও অন্য জোট থেকে বিভিন্ন দলকে টেনে আনার চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে জড়িত সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে না এলে শুধু ১৪ দলের জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে। এ ক্ষেত্রে জোটের বাইরে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। ২০১৪ সালে ১৪ দলের বাইরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির অলিখিত সমঝোতা হয়, তখন নির্দিষ্ট কিছু আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি বলে জাতীয় পার্টির ৩৪টি আসনে বিজয় সহজ হয়।
১৪ দলে আলোচনা, আসন সমঝোতায় জাপা
এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ১০০ আসন দাবি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৮০টি নিয়ে দর-কষাকষি করবে—এমনটাই আভাস। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকেরা নিজেদের মধ্যে প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের চাহিদাও ৮০ থেকে ৯০টি আসন।
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ৮৬ আসনে। জয়ী হন ৩৪ প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, এবার জাপার সঙ্গে সমঝোতা হলেও এত বেশি আসন দেওয়া হবে না।
১৪ দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জোটের প্রতি বৈঠকেই আসন বণ্টনের বিষয়টি তোলা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি জোটের প্রধান শেখ হাসিনা ঠিক করবেন।
জানতে চাইলে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি ও তাদের জোটের অবস্থান কী হয়, এর ওপর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট-মহাজোট নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে অক্টোবরের আগে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করা যাবে না। শরিকদের হিস্যা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের উদ্দেশ্য তো সরকার গঠন করা। ফলে প্রতিটি আসনে প্রতিপক্ষ কে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। জয়ী হতে পারবেন-এমন প্রার্থীই মনোনয়ন দিতে হবে। সংখ্যা এখানে বড় বিষয় নয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিনটি ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন সাংসদ ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জোটে যোগ হয়েছে তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)। সব মিলিয়ে শরিকেরা ১৫টি আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি, জাসদ ৫টি, তরীকত ফেডারেশন ২টি এবং জেপি ২টিতে জয়ী হয়। জাসদ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এবার জাসদের একটি অংশের প্রধান হিসেবে শরিফ নুরুল আম্বিয়ার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি তাদের ‘প্রেস্টিজ ইস্যুতে’ পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, তিনি নড়াইল-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং এলাকার জনমত বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, জোটের আসন বণ্টন যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে, ততই ভালো। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আসন বণ্টনের বিষয়টি প্রতি বৈঠকেই আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তিনিসহ তাঁর দলের কয়েকজন মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।-প্রতিবেদন প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন