‘বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ঠাঁই হবে না’, ভারতকে প্রতিশ্রুতি বিএনপির
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক মধুর নয়— এমন কথা প্রচলিত রয়েছে ঢাকার রাজনীতিতে। তবে এবার ‘তিক্ত’ সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে দুপক্ষের। এমনটাই দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক বসেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। উক্ত বৈঠকে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না, এ মর্মে ভারতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি।
বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণবিক্ষোভের মাঝে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এতে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। চলমান পরিস্থিতিতে ভারত তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্রকে হারিয়েছে বাংলাদেশে। তবে দুই মাস না যেতেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
এ বৈঠক নিয়ে এএনআইয়ের ভিডিওতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের (ভারত-বিএনপি) সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এবার আমাদের কার্যালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সফরে অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে।’
ভারতীয় দূতের বিএনপির সঙ্গে বৈঠককে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলছেন বিএনপি মহাসচিব। তার দাবি, বিএনপি ও ভারতে সম্পর্ক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। তবে বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন সম্পর্কের আরও উন্নতি হচ্ছে। এটি (বিএনপি কার্যালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সফর) ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি টার্নিং পয়েন্ট।’
হাসিনার পতনের পর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে দাবি করেছিলেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। গত ৯ আগস্ট টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জয় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত নিরাপদ থাকবে না।
এবার মির্জা ফখরুল ভারতীয় দূতকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভারতের কোনো বিচ্ছিন্নতবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
এএনআইকে ফখরুল আরো বলেন, ‘আমরা দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্ত এলাকায় হত্যা এবং বাণিজ্য বিষয়ে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপত্তা। আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যদি আমরা ক্ষমতায় আসি, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেব না।’
গত ১৫ বছরের শাসনামলে ভারতের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। ঢাকায় আওয়ামী লীগকেই সেরা বিকল্প মনে করে দিল্লি। বাংলাদেশের গত তিনবারের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিল ভারত। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এখন ভারতে রয়েছেন হাসিনা।
হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি জানি না, সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে কিনা। তবে আমি মনে করি, তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসা উচিত এবং তার জবাবদিহি করা উচিত’।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন