বিদায়ের পথে রমজান; প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

বিদায়ের পথে রমজান; প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

মুহাঃ আসাদুজ্জামান ফারুকী

এইতো ক্ষণিক কাল পার হলেই জান্নাতের তরী ফিরে চলে যাবে আমাদের ছেড়ে! বলতে পারব কী পূর্ণ সন্তুষ্টির ছামানাসহ তরী ভিড়বে রবের কিনারায়! মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। আমরা কি পেরেছি রহমতের বৃষ্টিতে অবগাহন করতে, মাগফিরাতের সাগরে ভাসতে, আমরা কি পেরেছি নাজাতের সুবাতাস হৃদয়ে বইতে।

রমজান বিদায় নিলেই ইফতার, সাহরি, তারাবিহ সব প্রস্তুতিশূন্য হয়ে পড়বে মুমিনের ঘরগুলো। নির্মল আনন্দ আর প্রশান্তির ইবাদত সোহার্দ্যের জোয়ারে আর ভাসতে দেখা যাবে না। সকল জায়গা থেকে মুছে যাবে সিয়াম সাধনার আমেজ। কিছু ব্যতিক্রম আছে বলেই খাঁটি রোজাদারদের হৃদয় কোণে তাই বেদনার্ত।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলি:

যাবার বেলায় সালাম লও হে পাক রমজান,

তব বিদায় ব্যথায় কাঁদিছে নিখিল মুসলিম জাহান।

একাধারে দুটি হজ্ব ও দুটি ওমরার নেকি লাভে এই শেষ দশকে আল্লাহর অনেক আবেদ ইত্তেকাফ করছেন। চাকচিক্যময় এই দুনিয়ার সকল কাজ বাদ দিয়ে শুধু মহান রবের সান্নিধ্য লাভে জায়নামাজে কাটিয়ে দিচ্ছেন দিবারাত্রি লাইলাতুল ক্বদর তালাশে গুনাহ মুক্ত করতে জীবনময় । আশা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার স্বপ্ন বুননে।

আশা হল; হতাশার গ্লানি স্পর্শ ছাড়াই, না পেয়ে পাওয়ার স্বপ্নে নিরব থাকা। যদিও মুমিনের জীবনে হতাশাও নেকী। শুধু প্রয়োজন সবরের।

মুমিনের প্রত্যাশা হল- মাহে রমজানে আরশের মালিক আমাদের রহমতের ছায়ায় শীতল করবেন, মাগফিরাতের চাদরে ঢেকে নিবেন, আর জাহান্নাম থেকে নাজাতের ফরমান জারি করবেন। রমজান তো আসেই মুমিনকে পাপশূন্য করে, সজীব করতে। জাহান্নাম থেকে মুক্তির খোশ-পয়গাম শোনাতে। একজন মুমিনের জীবনে এর থেকে বড় প্রত্যাশা আর কী হতে পারে?

কিন্তু আফসোস! বহু রোজাদারের রমজান শেষে দুনিয়ার সওদা কিনতে আখেরাতের সওদা বিনাশ হবে।এক মাসের অর্জন যেন মুহূর্তেই ম্লান। ভুলে যাই কী প্রত্যাশা ছিল রমজানে। অথচ রমজান এসেছিল ক্ষমা ও নাজাতের বার্তা নিয়ে, জান্নাত প্রাপ্তির। প্রাপ্তির এ সময়তো রোনাযারির, অশ্রু দানের। নিজেকে বড় অপরাধী ভেবে দরবারে ইলাহীতে মিনতি করতে থাকা।

শিশু বাচ্চা তার সব প্রয়োজন পুরণ করে কেঁদে কেঁদে। তার না আছে চাওয়ার ভাষা, না আবেদনের শক্তি। তাই সে কাঁদে এবং সব পেয়ে যায়। সুতরাং মানুষ যদি মালিকের কদমে মাথা রেখে বিনয়ের সাথে চোখ থেকে অশ্রু ফেলে, মালিক তাকে ক্ষমা না করে পারেন? আমাদের দিলতো পাথর ,কিছু দিল তো পাথরের চেয়েও শক্ত। তাই আমাদের চোখে পানি নেই। শেষ রাতে, মৃদু আধারে যারা কাঁদে তাদের রমজান কত সুন্দর। মালিকের সাথে তাদের প্রেম কত গভীর।

চলুন রমজানের শেষ সময়টুকু সবাই মালিকের কদমে সিজদায় লুটে পড়ি। কাঁদতে না পারলেও কাঁদার ভান তো ধরতে পারি। আশা রাখি মালিক আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। এটাই তো আমাদের বড় প্রাপ্তি।

জীবনের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে দেখি সময় ফুরিয়ে গেলো যে। কোন কিছুই কাজে আসবে না, বেঁচে থাকবে ও সঙ্গে যাবে শুধু নেক আমল এবং কৃতকর্ম। সকলের উন্নত জীবন এবং ভালো মৃত্যু হোক এই দোয়া ও কামনা করি সবাই সবার জন্য। রব্বে কারীম সকলকে হেদায়েত দান করুন-জানার বুঝার ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।

লেখক:

মুহাঃ আসাদুজ্জামান ফারুকী

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট।