বিদেশি ভ্যাকসিনে নয়, আপন আলোয় ফিরতে চায় বিএনপি
বিদেশি প্রেসক্রিপশন বা ভ্যাকসিনে নয়, আপন আলোয় আবারো জ্বলে উঠে হূত গৌরব ফিরে পেতে চায় বিএনপি। চলতে চায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের পথে। জাতীয় ও দলীয় স্বার্থের আন্দোলন-সংগ্রামে কাটাতে চায় পরনির্ভরশীলতা। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ শেষে এমন সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। প্রাক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে ভাঙবে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নীতিনির্ধারকরা আড়ালে-আবডালে সেদিকেই যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ৪১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা অতিক্রম করছে। প্রতিকূল অবস্থা উত্তরণে নানা ধরনের রাজনৈতিক ছক তৈরির চেষ্টা করছে দলটি। জোটকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আপাতত বের হওয়ার পরিকল্পনা না করলেও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জোট ২০-দলকে বিলুপ্ত করারও চিন্তা করা হচ্ছে। মূলত জামায়াতে ইসলামীকে কৌশলে মিত্রের তালিকা থেকে বাদ দিতেই এমন ভাবনা শুরু হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন করতে বিএনপির নিজস্ব সক্ষমতা আছে তা অতীতে প্রমাণিত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া দলের নিজস্ব আলো আছে। সে আলোতেই জ্বলে ওঠার সময় এসেছে। তারা গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠনও করেছে। এ চিত্র ২৮ বছর আগের। এখন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক বেড়েছে। তাই নিজ আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দিতে চায় শীর্ষ নেতৃত্বও।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রেক্ষিতে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে তা যে আজীবন করতে হবে তেমন নয়। রাজনীতির গতিপথ বদলায়, রাজনৈতিক দলের কর্মপন্থাও বদলে যায়। বিএনপিকেও এখন নতুন করে ভাবতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামগ্রিক বিবেচনায় বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বেশিরভাগ নেতা বর্তমানে জামায়াত-বিচ্ছেদের পক্ষে। এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দেওয়ার পক্ষে থাকলেও এখন এসেছে ভিন্নরকম ভাবনা। জামায়াতকে নিয়ে গড়ে তোলা ২০-দলীয় জোট কীভাবে বিলুপ্ত করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হয়েছে।
আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন- এই তিন ইস্যুকে সামনে রেখে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ আগে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়। ভাঙা-গড়ার শেষ সীমান্তে গিয়ে চারদলীয় জোট এখন ২০-দলীয় এবং এর বাইরেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের আরেকটি জোট গঠন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিদেশিদের নানান ফর্মুলা ধরেই দলীয় কর্মসূচি নির্ধারিত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু তাতে অর্জনের চেয়ে বিসর্জনই বেশি দিতে হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে জোটসঙ্গীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথমবারের মতো স্কাইপিতে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকা-না থাকা নিয়ে। পাশাপাশি জামায়াতকে বিএনপি জোটে রাখা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মিত্রের তালিকা থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতারা নিজেদের মতো করে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নানা দুর্বলতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সূত্র মতে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জামায়াতকে ২০-দলীয় জোটে রাখার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে যে বাস্তবতায় জামায়াতের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল সেটি আর এখন নেই। এখন জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। আন্দোলনেও তাদের পাশে পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় তাদের জোটে রেখে লাভ নেই। আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য তাকে সমর্থন করে বলেন, জামায়াত জোটে থাকুক অপর জোট সঙ্গীরাও চাচ্ছে না। আলোচনায় ২০-দলীয় জোট রাখার প্রয়োজনীতা নিয়েও সদস্যরা কথা বলেন। ২০-দলীয় জোটের প্রয়োজন নেই বলেও মতামত আসে বৈঠকে।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জামায়াত প্রসঙ্গে বৈঠকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছেন। ২০-দলীয় জোটও তার হাতে গড়া। তার অনুপস্থিতিতে ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে। যদি ২০-দল বিলুপ্ত করা হয় তাহলে চেয়ারপারসনের মতামত নিয়েই করা হবে বলে সদস্যরা একমত হন। এ ছাড়া ২০-দল ভেঙে দিলে বা জামায়াতকে বাদ দিলে ক্ষমতাসীনরা কোনো নতুন কৌশল করে কি না তাও ভেবে দেখতে হবে বলেও বৈঠকে মত আসে।
সূত্র জানায়, জামায়াতের প্রসঙ্গের বাইরে ঐকফ্রন্টের বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সমালোচনা করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল নাকি ভুল ছিল, তা ইতিহাস একদিন তুলে ধরবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন- এ আশায় নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা ও বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। তখন ওই নেতাকেই তাদের শীর্ষ নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত ছিল কি না এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
দলটির একাধিক নেতা জানান, মূলত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২০-দল ও ঐক্যফ্রন্টের নামসর্বস্ব রাজনীতি বন্ধ করে নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে দলকে গোছানোর বিষয়ে মতামত দেন নেতারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন