বিশ্বে কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে এইডস রোগী
বাংলাদেশে এইডস ও এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। অথচ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগের সংক্রমণ কমছে।
অভিবাসন প্রক্রিয়া ও সীমান্ত এলাকায় অসচেতন যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও ব্যাপকভাবে এইডসে আক্রান্ত। তাদের মাধ্যমেই দেশে রোগটি ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এইডস আক্রান্তদের নিয়ে সরকারি কোনো জরিপ হয়নি। ২০১১ সালে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এইডস ও এইচআইভিতে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনেকে মনে করেন, দেশে ১০ হাজারের বেশি এইডস রোগী আছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত বুধবার জাতীয় সংসদকে জানান, ‘২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৮৬ রোগী এইচআইভি পজিটিভ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২৪ জন মারা গেছেন।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো রোগে জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হলে পরিস্থিতিকে ‘কেন্দ্রীভূত মহামারী’ বলা হয়। সরকারি উদ্যোগে ২০১১ সালে রক্তের নমুনা জরিপ (সেরো সার্ভিল্যান্স) মতে, শুধু ঢাকায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এইচআইভি পজেটিভ ও এইডসে আক্রান্ত। গত সাত বছরে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা মনে করেন, রোহিঙ্গারা এইডসের ব্যাপক ঝুঁকিতে আছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মিয়ানমারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখের ওপর। আর প্রতি হাজারে আটজন এইচআইভি পজিটিভ। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রকট।
বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যৌন সম্পর্কের কারণে বর্তমানে ভীষণ ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকার তাগিদে রোহিঙ্গা নারীরা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌন ব্যবসায় নেমেছেন। ফলে রোগটি ছড়াচ্ছে। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১২ থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ১৮৯ এইডস রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৬৪ জন রোহিঙ্গা।
ভারতের জাতীয় এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির গত মে মাসে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যে এইচআইভি ও এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ যৌন সম্পর্কে জড়ানোয় রোগটি ছড়াচ্ছে।
এ ছাড়া বন্দর এলাকায় আসা ভারতীয় ট্রাকচালকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগটি ছড়াচ্ছে বলেও অনেকের ধারণা। কারণ, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য খালাস করতে ভারতীয় ট্রাকচালকদের বেশ কয়েকদিন অবস্থান করতে হয় এ দেশে। এ সময় তারা অবাধে মেলামেশা করেন ভাসমান যৌনকর্মীদের সঙ্গে। এতে এইডসহ নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে স্থলবন্দরের আশপাশের মানুষ। বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ জানায়, অভিবাসনের মাধ্যমেও দেশে এইডস সংক্রমণ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া বাংলাদেশিদের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াচ্ছে।
প্রবাসীদের ৩০ শতাংশের মাধ্যমে দেশে এইডস ছড়ায় বলেও কয়েকটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব কারণে অনেক বেশি এইডস রোগী আছেন বৃহত্তর সিলেটে।
২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৮৩২ জন এইডস রোগীকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সিলেট জেলায়ই আছেন ৫৪৬ জন। বাকিরা, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের। সরকারি হিসাবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে এইচআইভি ও এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৮৫। এরপর থেকেই রোগী বাড়ছে। ২০১৩ সালে শনাক্ত হন ৩৭০, ২০১৪ সালে ৪৩৩, ২০১৫ সালে ৪৬৯ ও ২০১৬ সালে অন্তত ৬০০ জন। এইডসে মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতি বছর বাড়ছে। ২০১৩ সালে ৮২, ২০১৪ সালে ৯১ এবং ২০১৫ সালে ৯৫ জন মারা গেছেন। ২০১৬ সালে মারা গেছেন ১০০ জনের বেশি। ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ রোগে অক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯২৪ জন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন